পুরাণবাজারের রিফিউজি ক্যাম্প ভূমিদস্যুদের দখলে

 In চাঁদপুর, প্রধান খবর, লিড নিউজ




স্টাফ রিপোর্টার:



চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে রিফিউজি ক্যাম্প এখন আর বিহারীদের দখলে নেই। স্থানীয় ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বের কারনে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে বিহারী পরিবার। এক সময়ের রিফিউজি ক্যাম্পে এখন গড়ে উঠেছে মাদক ও সন্ত্রাসের আখড়া হিসেবে। যদিও ব্রিটিশ আমলে বিহারীদের আবাসস্থল হিসেবে তৎকালীন সরকার ঐ রিফিউজি ক্যাম্পটি নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অথচ আজ ঐ ক্যাম্পে বিহারীরাই অতিথি।



জানা গেছে, এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজার ছিল ভাওয়াল জমিদারের এলাকা। সে সময় বর্তমান রিফিউজি ক্যাম্প এলাকাটি দেশের বৃহত্তম পতিতা পল্লিতে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে তৎকালিন সরকার পতিতা পল্লি ভেঙ্গে প্রায় সোয়া দুই একর জমিতে তিনশত ঘর তৈরি করে দেয় অবাঙালী বা মোহাজোরদের বাসস্থানের জন্য। তখন থেকেই এই রিফিউজি ক্যাম্পের উদ্ভব। সে সময়ে রিফিউজি ক্যাম্পে ১২৭টি বিহারী পরিবার বসবাস করত।



১৯৫৪ সালের ১৩নভেম্বর ঐ ক্যাম্পে এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। সে সময় আগুনে পুড়ে মারা যায় মহিলা শিশুসহ ১০জন। আহত হয় আরো প্রায় ৭০জন। ঐ ঘটনার পর সর্বস্ব হারিয়ে রিফিউজি ক্যাম্প থেকে চলে চায় ২০টি পরিবার। তখন থেকেই শুরু হয় রিফিউজি ক্যাম্প দখলের পায়তারা। পর্যায়ক্রমে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র জবর দখল করে ক্যাম্পের অধিকাংশ জায়গা নিজেদের করে নেয়। বর্তমানে বিহারী পরিবারগুলো মাত্র ২৫শতাংশ ভূমির উপর মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফলে অস্থিত্ব সঙ্কটে পড়েছে বিহারীরা।



এদিকে ভূমি দখলের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে তৎকালীন বিহারী পরিবারগুলো একটি মামলা দায়ের করে। ঐ মামলায় ১৯৮৭ সালে বিহারীদের পক্ষে রায় দেয় আদালত। সেই সাথে ১১২টি অবৈধ পরিবারের বিরুদ্ধেও উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে প্রভাবশালীচক্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দখলের ঘটনা আরো বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে ঐ ক্যাম্পে প্রায় ৩৫০টি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮৪টি পরিবার বিহারী আর বাকী ২৬৬টি পরিবার হচ্ছে অবৈধভাবে দখল করে নেয়া। বর্তমানে জবরদখলের ঐ সব পরিবারগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালীদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করার অভিযোগ সর্ব মহলে।



এমনকি ভূমিদুস্য প্রভাবশালীদের কারণে রিফিউজি ক্যাম্পে অবস্থিত একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খলিল আহমেদ নানিতালওয়ালা প্রাইমারী স্কুলটিও বন্ধ হয়ে যায়। গত ২৯ মার্চ ’১৫ চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনের পর ১নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী মাঝির নিজস্ব অর্থায়নে পুণরায় চালু হয় ঐ বিদ্যালয়টি। বর্তমানে ঐ প্রাইমারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫০টি শিশু পড়া-লেখা করছে।



রিফিউজি ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা জানায়, অবৈধভাবে দখল নেয়া ঐ সব পরিবারগুলো মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। তারা মাদক বিক্রি, সেবন থেকে শুরু করে মারামারি-কাটাকাটি মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পকে সন্ত্রাসী এলাকায় রুপান্তর করে ফেলেছে। এতে করে বিহারী পরিবারগুলোর স্বাভাবিক জীবন যাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।



তারা জানায়, ঐ সব পরিবারগুলো তাদের নামে সরকারের দেয়া বরাদ্ধকৃত রিফিউজি ক্যাম্পটি পুণরুদ্ধারে একাধিকবার চাঁদপুর পৌর মেয়রের কাছে অভিযোগ দিলেও সুফল পাচ্ছে না কেউ। তাদের অত্যাচারে অনেকটাই কোনঠাসা বিহারীরা। এমতাবস্থায় তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে প্রশাসনসহ পৌর মেয়রের সহযোগীতা চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।



এ ব্যাপারে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, এ ব্যাপারে কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে বিষয়ে সরকারি আলাদা দপ্তর রয়েছে। সেখানে অভিযোগ দিলে তারা যদি আমার সহযোগীতা চায়, তখন আমি করবো।


Recent Posts

Leave a Comment