নামকায়েস্ত সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী ধরতে গিয়ে পুলিশের নাস্তানুবুদ হওয়ার ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ
বিশেষ প্রতিনিধি:
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী গ্রামের ইব্রাহিম ভূইয়ার বাড়িতে এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। এলাকার নারী পুরুষ সবার মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক ভর করেছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ কোনো কথা বলছে না। অপরিচিত মানুষ হলে, আর মোটেই কথা নেই। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে একজন নামেমাত্র কিংবা সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী ধরতে গিয়ে পুলিশ এতো নাস্তানাবুদ হবে এ নিয়ে চলছে পুরো জেলা জুড়ে নানা আলোচনা সমালোচনা।
পুলিশের ভাষ্য ও তথ্য মতো, গত সোমবার ১৭ আগস্ট মাদক উদ্ধার করতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এসময় উপজেলা সদর আলগী বাজার থেকে রিপন ও তেলিরমোড় এলাকা থেকে বিল্লাল নামে দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে রিপন ও বিল্লাল জানায়, তারা ৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ আলগী গ্রামের হাইমচর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের জসিম ভূঁইয়ার কাছ থেকে ইয়াবা ক্রয় করেছে। এরপর হাইমচর থানার উপ-পরিদর্শক ইউনুছের নেতৃত্বে সহকারী উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ, আবুল কালাম, আনোয়ার ও সিপাহী আব্দুল হালিমসহ পুলিশ সদস্যরা জসিমকে আটকতে তার বাড়িতে রাত ১১টার দিকে অভিযান চালায়। এসময় পুলিশের বেশির ভাগ সদস্য ছিল সিভিল পোশাকে। তাই পুলিশ এক প্রকার জোর করে জসিমের ঘরে ঢুকতে চাইলে ঘর থেকে জসিমের স্ত্রী ডাকাত বলে চিৎকার দেয়। এসময় বাড়ির লোকজন এসে পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা চালালে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে থানায় চলে যায়। পরে রাত তিনটার দিকে পুলিশ সদস্যরা জসিমের বাড়িতে পুনরায় অভিযান চালায়। এসময় বাড়ি থেকে দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। মাদক খোঁজ করতে গিয়ে জসিমের ঘরের সব তছনছ করা হয়। এক প্রকার সন্ত্রাসী কায়দায় এ তান্ডব চালানো হয় বলে অভিযোগ তাদের। এমনকি তল্লাশীর সময় বিভিন্ন মালামাল লুটপাটেরও অভিযোগ করা হয়। অথচ দীর্ঘ অভিযান শেষে জসিমের ঘর থেকে কোনো মাদক দ্রব্য কিংবা নিষিদ্ধ কোনো দ্রব্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ ঘরের ভেতরে যেন এক যুদ্ধবিদ্ধস্থ পরিস্থিতি। পুলিশি আতঙ্কে ঘরের দরজা কিংবা সন্ধ্যা প্রদীপ দেয়ার মতো কেউ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে মানুষ থাকতে পারবেনা সেখানে আইন প্রয়োগ
করা হবে কোথায়?
জসিমের স্ত্রী রুমা বেগম মুঠোফোনে বলেন, দাবি সিভিল পোশাকে এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঘরের দরজা ধাক্কাতে থাকে তারা। ঘরের ভেতর থেকে দরজা না খুললে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে। কিন্তু তাদের গায়ে পুলিশের পোষাক না থাকায় আমরা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করি। এসময় বাড়ির লোকজন এসে তাদের উপর হামলা চালালে পুলিশ বাড়ি থেকে চলে যায়। পরে জানতে পারি কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আমাদের ঘরে যে তান্ডব চালানো হয়েছে, তা অবশ্যই পুলিশ করনি। পুলিশের সাথে থাকা অন্য লোক দিয়ে করানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশে স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, পুলিশ এতো বড় অভিযান পরিচালনা করলো অথচ মাদকের অস্তিত্বও পেলো না। এটা কেমন কথা? তাছাড়া একজন মাদকসেবীকে গ্রেফতার করে তার তথ্য মতে পুলিশ কাউকে গ্রেফতারে অভিযান চালাবে এটাতো কথা হতে পারে না। তাছাড়া ওই ঘরে বা বাড়িতে কোনো ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী ছিলনা যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। একজনকে মাদক ব্যবসায়ী বললে পুলিশকে তা বিশ্বাস করতে হবে এটা কেমন কথা। তাছাড়া জানা গেছে, কৃষকলীগের এ নেতার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে একটা মাদক মামলা হয়েছে। তাও আবার ৬ নম্বর আসমী হিসেবে। মামলাটি দায়ের হয় গত ২৯জুন ২০১৫। তাহলে ধৃত দুইজন মাদকসেবীর ভাষ্যমতে জসিমকে ধরতে এতো বড় অভিযান কেন? প্রশ্ন স্থানীয় অনেকের। এদিকে এ ঘটনার পরপর জসিমের পরিবারের সবাই আত্মরক্ষায় বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এদিকে ইয়াবা ব্যবসায়ী জসিম হাইমচর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের গ্রুপিং রাজনীতিতে জসিম একটি গ্রুপের পক্ষে সক্রিয় কাজ করায় একটি মহল এ সুযোগে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ ঘটনার সাথে গ্রুপিং রাজনৈতিক কর্মীদের জড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে কানাঘুষা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত ১৮ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে হাইমচরে মাদকদ্রব্য উদ্ধারে পুলিশি অভিযান এবং পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় চাঁদপুর জেলা যুবলীগ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে একটি মহলের অশুভ ইঙ্গিতে ওই মামলায় উত্তর আলগী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ মাঝিকে আসামী করা হয়েছে। নিরপরাধ এ নেতা-কর্মীদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানির ঘটনায় চাঁদপুর জেলা যুবলীগ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সে ক্ষেত্রে এঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এ ব্যাপারে হামইচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওয়ালি উল্লাহ জানান, এ ব্যাপারে দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত চলছে ৮ আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জসিমের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে বলেন, তার বিরুদ্ধে একটা মাদক মামলা রয়েছে। এছাড়া জনশ্রুতি আছে সে মাদক ব্যবসা করে।