চাঁদপুরের হাটগুলোতে মোটা-তাজা গরুতে আগ্রহী নয় ক্রেতা
চাঁদপুর সংবাদদাতা:
চাঁদপুর শহর ও শহরতলীসহ বিভিন্ন গরুর হাটে প্রচুর মোটা-তাজা গরু, মহিষ ও ছাগল উঠলেও ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। এতে করে হতাশায় পরে খামারী ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বিপাকের মধ্যে রয়েছে। সচেতন ক্রেতারা বুঝতে পেরেছে এসব অতি মোটা-তাজা পশুকে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ খাইয়ে এরকম মোটা-তাজা করা হয়েছে।
তাই ক্রেতারা দেশীয় চিকন ও ভারতীয় উচু গরু ঈদের ২/১ দিন পূর্বে পাওয়া যাবে এ আসায় অপেক্ষার প্রহর গুনছে। চাঁদপুরে ভারতীয় বিষাক্ত ক্ষতিকারক ট্যাবলেট ও ইনজেশান ব্যবহার করে জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, চান্দ্রা, মতলব ও চর অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু, ছাগল ও মহিষের ওজন বারানোর জন্য স্টেরয়েড টেবলেট, পাম টেবলেট ও ইনজেকশান ব্যবহার করে গরু মোটা-তাজা করে হাটে উঠানো হয়েছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদপুর জেলাধীন ফরিগঞ্জ, চান্দ্রা, হাজীগঞ্জ এলাকা ঘুরে জানা গেছে, রোগাক্রান্ত কিংবা কম ওজনের গরু, ছাগল ও মহিষের দ্রুত ওজন বাড়াতে ‘পাম’ টেবলেট খাওয়ানো হয়েছে। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে বাঁচতে ক্রেতারা শুকনো প্রকারের গরুকে নিরাপদ ভাবছেন। ক্রেতাদের চাহিদা মাথায় রেখে কিছু কিছু খামারে ও বাড়িতে নিরাপদ গরু পালন করা হচ্ছে। গত বছর ও চলতি বছর ভারতীয় গরুর আমদানির ওপর সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় এবার খামারে গরু প্রস্তুত করে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করার কথা ভাবছেন খামারিরা।
মতলব উত্তরের খামারি মানিক ঢালী এবার কোরবানি উপলক্ষে ১৪টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর আগেই গরুর খামার দিয়েছি। তবে ভারতীয় গরু আর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে খুব লাভবান হইনি। প্রতি বছর ভারতীয় গরুতেই সয়লাব হয়ে থাকে বাজার। এর ওপর বিভিন্ন বড়ি খাওনো মোটা-তাজা গরুর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দেশি গরু টিকতে পারে না। কিন্তু মানুষ দিন দিন সচেতন হচ্ছে। দেশি গরুর চাহিদা তুলনামূূলক বেড়েছে এবং আশানুরূপ দামও ভাল পাওয়া যাবে বলে আশা করেছেন তিনি।
ছেংগারচর গরুর হাটে দেখা গেছে, দেশি গরুর চাহিদা বেশি। কারণ, জানতে চাইলে ছানু মিয়া নামে এক বিক্রেতা জানান, গেল দুই বছর সব হিসাব পাল্টে গেছে। মানুষ এখন মোটা-তাজা গরুর বদলে তারা পাতলা গরু খোঁজে। তিনি আরো বলেন, গত কোরবানিতেও তিনি মোটাতাজা করা গরু হাটে তুলে বিক্রি করতে পারেননি। পরে সেই গরু লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন কসাই’র কাছে। এতে খামার, পুঁজি সব শেষ। এখন বাড়িতে গরু পালন করে হাটে বিক্রির জন্য এনেছেন।
চিকিৎসকরা জানান, এসব ঔষধ হাঁপানিসহ মানবদেহের জটিল সব রোগের ঔষধ। এসব সেবনে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। গরুর শরীরে এসব ট্যাবলেট ও ইনজেশান ব্যবহার করার ফলে গরুর মাংস বিষাক্ত হয়ে যা। আবার মাত্রাতিরিক্ত সেবন হলে যার প্রভাব ভয়ঙ্কর। এসব ঔষধই খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে। এতে অল্প দিনে ফুলে-ফেঁপে উঠছে গরু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছেংগারচর এলাকার একজন গরু খামারি জানান, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সারা বছর গরু পালন করে তেমন লাভ হয় না। তাই তার মতো অনেক খামারি কোরবানি ঈদের দিকে চেয়ে থাকেন। ঈদ ঘনিয়ে আসলেই শুরু হয় গরু মোটা-তাজাকরণের প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন ইনজেকশন প্রয়োগ ও ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ইউরিয়া সারও খাওয়ানো হয়। আর এতেই অল্প সময়ের মধ্যে ফুলে ফেঁপে ওঠে গরু। ওই খামারি দাবি করেন, বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও জানেন। গরু মোটা-তাজা করতে অনেক সময় তারাই বিভিন্ন ওষুধের নাম লিখে দেন। তাই বিষয়টিকে বৈধ বলেই ধরে নিয়েছেন গরু খামারিরা।
এ ব্যপারে চাঁদপুর জেলা পশু হাসপাতালের ভ্যাটেনারী র্সাজেন ডাঃ সাইফুল আলম জানন-এ ঔষধ গুলো গরুকে অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ানোর ফলে গরুর কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে যায়। তাই শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না । এ কারনে শোষিত হয়ে পানি মাংসে চলে যায় । জেলা সদর হাসপাতালের সহকারী রেজিষ্টার ডাঃ ফরিদুল হক টুটুল জানন, কোন ধরনের পরিক্ষা ছাড়াই জবাই করা মাংস খেলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে এবং লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র, মস্তিস্ক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।