হাজীগঞ্জে হরদমে চলছে নকল

 In চাঁদপুর, দেশের ভেতর, প্রধান খবর, শীর্ষ খবর, হাজীগঞ্জ উপজেলা




মনিরুজ্জামান বাবলু



শিক্ষার আলোয় আলোকিত চাঁদপরের হাজীগঞ্জ এখন নকলে নাকাল অবস্থা। প্রবাদ বাক্যে আছে, হারি-জিতি নাহি লাজ, দশে মিলে করি কাজ। আর সেই কাজটি এবার এইচএসসি পরীক্ষার হলগুলোতে এমন চিত্র মিলেছে। সবাই মিলে নকলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। এই নকলকে কেন্দ্র করে মারামারির মতো ভয়ংকর ঘটনাও ঘটেছে।



সম্প্রতি হাজীগঞ্জ উপজেলায় সাতটি পরীক্ষা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে নকলের ভয়াবহতার চিত্র। হাজীগঞ্জ শহর এলাকার বাহিরের কেন্দ্র গুলোতে চলছে হরদম নকল করে পরীক্ষা। সোমবার পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে গিয়ে হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের পরীক্ষার্থী মঞ্জুর আলম বহিষ্কার করে কুমিল্লা বোর্ডের পরির্দশক দল।



নকল কাকে বলে? দেখাদেখি করে লেখাটা নকলে আওতায় পড়ে কিনা? জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. মুর্শিদুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই দেখাদেখি করে পরীক্ষা দেয়াটা নকলের শামিল। এ বিষয়ে কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে যে শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেনÑ তিনিই এর দায়ভার নিবেন। নকল যে করবে আর নকল যে সহায়তা করবেÑ প্রমাণ পেলে আমরা তাকে আইনের আওতায় আনবো।



কাকৈরতলা ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রসা (কাকৈরতলা জনতা কলেজ) কেন্দ্রে প্রবেশকালে বাঁধার মুখে পড়তে হয়। ভিডিওধারণ করা চিত্রে দেখা গেছে, পরীক্ষার হলগুলোতে দায়িত্বরত শিক্ষকরা দৌড়াদৌড়ি করছে। এতেই বুঝা যায়Ñ সাংবাদকর্মী প্রবেশের আগে পরীক্ষার হলের চিত্র কেমন ছিল? এই কেন্দ্রে নকলের দায়ে ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় এক ছাত্র বহিস্কার হয়।



অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত বছরে উপজেলার দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ধড্ডা মোয়াজ্জেম হোসেন ডিগ্রী কলেজে নকলের হালচিত্র। কেন্দ্রটির প্রতিটি কক্ষেই পরীক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে সরবরাহকৃত নকল করেই পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষের পর্যবেক্ষকগণ ম্যানেজ হয়েই কেন্দ্রে প্রবেশ করে।



অনুসন্ধানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন কলেজ থেকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের যাতায়াত সুবিধা, ভাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যাবস্থা ও নগদ উৎকোচ প্রদান করে স্বার্থ আদায় করা হচ্ছে। স্বার্থটি হচ্ছেÑ পরীক্ষার্থীদের নকল ও দেখাদেখি করার সুযোগ দেয়া। একইভাবে নাসিরকোর্ট শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ, দেশগাঁ কলেজের চিত্র।



এক সময় নকল নিয়ে হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মারামারির ঘটনা ছিল অহরহ। তারপর নকল নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ। সম্প্রতি জীব বিজ্ঞান পরীক্ষায় হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের পরীক্ষার্থীদের সুবিধা না দেয়ায় ভাংচুর ও হামলা চালায় বলে দাবী করেছেন হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ। আবার হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ করেন, পরীক্ষার হলে উত্যাক্ত ও ১০ মিনিট আগে পরীক্ষার উত্তরপত্র নিয়ে গেছে ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা। পাল্টাপাল্টি অভিযোগে জেলাবাসীকে নকলের বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করে তুলেছে।



ধড্ডা মোয়াজ্জেম হোসেন ডিগ্রি কলেজ নকল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ধড্ডা কলেজে নকলের এমন দৃশ্য আমার জানা নেই। দায়িত্বে আছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রশীদ ও অধ্যাপক মফিজুর রহমান। তাঁরা ভালো বলতে পারবেন।



জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ধড্ডা মোয়াজ্জেম হোসেন ডিগ্রি কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুব রশীদ জানান, কাগজ নিয়ে হলে কেউ আসে না। কাগজের নকল হয় না। হয়তো একটু দেখাদেখি হয়। আর আমার দায়িত্ব পরীক্ষার হলের ভিতরে নয়, বাহিরের পরবিশে ঠিক রাখা।



দায়িত্ব অবহেলা নাকি অন্যকিছু! জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলী রেজা আশ্রাফী বলেন, নকলের প্রমাণ মিললে কক্ষ পরিদর্শকের এমপিও স্থগিত করা হবে। তিনি হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ভাংচুর ও হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ভুল। আগে খাতা নেয়া হয়নি। মুলতঃ ওইদিন তাদের পরীক্ষা ভাল হয়নি।



হাজীগঞ্জ উপজেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুর রশিদ মজুমদার প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। এতটুকু বলবো নকল মুক্ত পরীক্ষা হওয়াটাই মঙ্গল।



নকল প্রসঙ্গে কথা হয় কুমিলা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ এর সাথে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, নকল প্রতিরোধে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যেসব কেন্দ্রে নকল সরবরাহ ও দেখাদেখি হয়, আমরা সেসব কেন্দ্রের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আপনার সচিত্র প্রতিবেদন করলে ভালো হবে।


Recent Posts

Leave a Comment