আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু আওয়ামী লীগের
প্রতিবেদক।। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলীয় সাংসদদের চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে তদারক করার এবং নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে পরবর্তী নির্বাচনের সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা ও নির্দেশনা আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়সহ কেন্দ্রীয় ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারিত আছে আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই দলের শেষ জাতীয় সম্মেলন।
এর আগে গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী দলের সাংসদদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সাংসদ প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার জনগণের সঙ্গে মেলামেশার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নের প্রচার; চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা; সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে উঠানবৈঠক; বিরোধী পক্ষের কেউ যেন মাঠ দখল করতে না পারে এবং সাংসদের নিজ এলাকায় কী ধরনের উন্নয়ন দরকার, তার নোট নেওয়াসহ বেশ কিছু মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পরবর্তী নির্বাচনে সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের তালিকা করার জন্য মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নিতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বর্তমান সাংসদদের জনপ্রিয়তা, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ, নানা অভিযোগ এবং দলে অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিটি আসনে অন্তত পাঁচজনের নাম দিয়ে তালিকা তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিদেশি একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানকেও মাঠের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ মনে করছে আগামী জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে টিকে থাকার মতো সাংগঠনিক অবস্থা বিএনপির নেই। এ অবস্থায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের দর-কষাকষির মূল জায়গা হয়ে উঠতে পারে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কার কী অবস্থান হবে সেটাই।
দলীয় প্রধানের নির্দেশনা, দলের পরবর্তী সম্মেলন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের দুজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও তিনজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং পাঁচজন সাংসদের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই সর্বত্র দলীয় প্রতিনিধিদের বসানোর লক্ষ্য ঠিক করে সরকার। এ জন্য নানা প্রতিকূলতা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও সারা দেশে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সব নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে জেলা পরিষদের নির্বাচন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে।
ওই নেতারা আরও বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত আগাম নির্বাচনের লক্ষণ নেই। তবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় নিয়েই দলের বিভিন্ন স্তরের প্রায় এক হাজার নেতা-কর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার জন্য দল থেকে তাঁদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের আগেই দলের বিভক্তি কমানো ও শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের আগেই প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন। সেই প্রস্তুতি আমাদের চলছে। দলের কাউন্সিল শেষে নির্বাচনী প্রস্তুতির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে।’
আওয়ামী লীগের তিনজন সাংসদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত জুলাইয়ে সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন যে সরকারের মেয়াদ আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। সংবিধান অনুসারে আগামী জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী আড়াই বছরের মধ্যেই হবে। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে না—এমন কোনো সিদ্ধান্তও দেননি প্রধানমন্ত্রী। তাই আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, তা নিয়ে নেতাদের কারও কারও মধ্যে জল্পনা-কল্পনা আছে।
ওই তিন সাংসদ বলেন, ভোট কবে হবে তা তাঁরা নিশ্চিত জানেন না। দলীয়প্রধান বলেছেন প্রস্তুতি নিতে, তাই সবাই প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
অবশ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দুই-আড়াই বছর খুব বেশি সময় নয়। এখন থেকে জনসংযোগ শুরু করলেও অনেক কাজ বাকি থেকে যাবে। তাই কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এবারের ঈদুল আজহায় শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে দলের মন্ত্রী, সাংসদ ও মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় বেশ সক্রিয় ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি অনেক সাংসদ নির্বাচনী জনসংযোগও করেছেন। আমি নিজেও আমার নির্বাচনী এলাকায় ঘুরেছি। কারণ নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই।’