সৌম্য সালেকের কবিতা
বীক্ষণ
অবিরাম ধান কেটেছি গত ঘুমে— কাস্তে ছিল ঘামের জোয়ার
অবিরাম মাছ ধরেছি গত ঘুমে— জাল ছিল নিশ্ছিদ্র তুষার
অবিরাম পুড়েছে জীবন গত ঘুমে— অসহ রাতের শরম
অবিরাম বীজ বুনেছি গত ঘুমে— মাটি ছিল নারীর নরম
অবিরাম হেঁটেছি শ্রমণ গত ঘুমে— মন ছিল মত্ত শ্রবণে
অবিরাম গেয়েছি গান গত ঘুমে— বেহুলার অশ্রু শ্রাবণে
আরো অবিরাম,অবিরাম কেটেছে প্রহর কত অনুভবে জেনে যাই আমি
তবু গানে ও গমনে বুঝি না জীবনে— চাষ করি কার জমি…
মদিরাক্ষী
পাপে অনুতাপে শৌর্যে ও শীতে
দেহ চায় দেহ— মন পেলে মন
এভাবে কিছু নদী, কিছু বন, কিছুটা সমুদ্র ছিল চোখে
সেই স্বর, সেই সুর বুকের কপাট খুলে কত
এভাবে আরো জল অশ্রুলগন আরো ভার
পুরাণ আছর লেগে বেড়ে গেছে দেখার বয়স
আর কত অধীর ঝুলন, কত শাপ রক্তবিলাস
ঘাইমারা বুকের পাথর গলে— কত নদী শতদ্রু…
মদিরাক্ষী, দেখো চেয়ে নিশান্ত মাধুরী
এখন মরণ ভালো— চলো চলো নামো নামো…
অন্তরীণ মধুপের শিস
প্রভু, তাহলে মৃত্যু দাও— আত্মঘাতি উৎসবের মতো
কোকিলার স্নেহে পান করি উষ্ণতার শীত
প্রভু, নইলে সংরক্ষিত বাগানের ফুলে সেঁটে দাও
গোটা কয়েক শুদ্ধস্তন
আর বিজিত অধম ভেবে আমাকে প্রবেশাধিকার দাও
শপথ—সঙ্গলিপ্সায় কোনো দিন বনে বাজারে ঘুরবো না
প্রভু, অন্তত পাহাড়-প্রসূত প্রস্রবনে একটা বিয়ে দিও
যদি অতিরিক্ত আদরে মরে যাই
লোকদের ভাসিয়ে দিতে বলো—
আরক্ত গোলাপের স্রোতে…
বুকের হেরেম খুলে
আমিও একটা মূর্তি বানাবো পিগম্যালিয়ন
বাঁকের ভাঁজে ভাঁজে বুনে বুনে সুক্ষ্মবীজ
স্পর্শের ধর্ম মেনে মেখে মেখে আঙুর-কেলাস
যাতে ক্ষণে ক্ষণে জন্ম হয় নতুন রওশন
তাহলে স্তব্ধ হোক নগরীর নিয়ম-নখর
বন্ধ হোক বাতাসের মাতাল প্রচল
আধো জ্যোৎস্নার ভাসে ঘুমাক পিয়াসুর মন
আমি চাঁদ, শৈলপ্রপাত, সমুদ্র ফেনা আর
সৌর-সুনীলের সাথে মিলেমিশে কুড়াই স্থাবর হাত
কুঠার, মৃত রঙ, যৌথস্বর আর—
আর এই গরগরে চেতনার রাগ
পিগম্যালিয়ন— জেনো
আমি তুচ্ছ করে ভেনাসের বর
এই তাম্র-তৃষ্ণার হাতে এমন বানাবো
গ্যালাটিয়া অজ্ঞান হবে, চূর্ণ হবে হেলেনের মুখ
শৌর্যের পাটা দেখো— বুকের হেরেম খুলে
শিল্প চিনে প্রেমিকপ্রবর…
মানুষ গল্প করে
কেবল গল্প গজিয়ে ওঠে— গল্প আর গল্প
স্বপ্নে-জাগরণে শরীরে ও মনে
নাক থেতলে যাবার গল্প, চোখ উপড়ে ফেলার গল্প
হৃদয় ভেঙে যাবার গল্প—কথা না রাখার গল্প
রাত জাগার গল্প—ম্যাচ জেতার গল্প
সমুদ্র ভোগের গল্প—উদ্দাম উলঙ্গ দিনের গল্প
একটা কবিতার গল্প—
গল্প চারপাশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মননে মজ্জায়
দুধধোয়া কোমল হাতটি কিভাবে কামুক হয়ে ওঠলো তার গল্প
জামালের পা’দুটি কিভাবে কাটা পড়লো তার একটা গল্প
সময়ের ধারাপাতে গোপনে গোপনে তুমি স্বপ্নকে রাঙিয়ে চলো কাটো-ছাঁটো
কিংবা মনোমতো বাঁধো তারও একটা গল্প
অথবা প্রতীক্ষায় সতের বছর গেছে—গল্পটা কেউ জানে না
জানে না সেই মেয়েটি—তাই হিম সন্ধ্যার মতো নতবাক্ গল্পটা এগিয়ে চলছে নিজে নিজে…
তুমি—একটা হাটুরের গল্প শোনাও যার পদ্ধ্বনি বাতাসে মিশেছে মৃদু সুরে
তুমি— একটা পাহাড়ের গল্প শোনাও যার নিরল প্রপাত কেউ শোনে নি—
দেখেনি কখনো সেই মৌসুমকলা— বিরল বাহার
তুমি— সেই বালিকার গল্প শোনাও— সিন্ধুবোধিনী যারে নিয়ে গেছে ঠোঁটে করে টারশিয়ারী যুগে—
নগরে পতন লাগে— মানুষ গল্প করে…