২০১৪ সালের পর এই প্রথম কোনো টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের মুখ দেখল পাকিস্তান। এর আগের সাতটি টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় কিংবা ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল মিসবাহর দল। তবে নিউজিল্যন্ডের মাটিতে সেই ধারায় ছেদ পড়ল। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। সেই হিসেবে আড়াই দিনের সামান্য বেশি সময়ে সমাপ্তি ঘটল টেস্টটির।
জয়ের জন্য ১০৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলীয় ১৯ রানের মাথায় টম লাথামকে (৯) হারায় নিউজিল্যান্ড। এরপর জিত রাভাল ও কেন উইলিয়ামসন মিলে ৯৫ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে স্বাগতিকদের জয়ের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেন।
দলীয় ১০৪ রানের মাথায় আজহার আলির বলে আসাদ শফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে উইলিয়ামসন ফিরে গেলে হেনরি নিকোলস ও রাভাল মিলে জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতাটুকু সেরে ফেলেন। প্রথম ইনিংসে বিধ্বংসী এক স্পেলে পাকিস্তানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়ায় অভিষিক্ত কলিন ডি গ্রান্ডহোম ম্যাচ-সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের হয়ে উইলিয়ামসন সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন। রাভাল ৩৬ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন। তার সঙ্গী নিকোলস অবশ্য কোনো বল মোকাবেলা করাই সুযোগই পাননি।
পাকিস্তানের হয়ে মোহাম্মদ আমির ও আজহার আলি একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে রোববার ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের চতুর্থ দিন ৭ উইকেটে ১২৯ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। সোহেল খান নয় নম্বরে নেমে দারুণ এক ইনিংস খেললেও অন্যান্যদের ব্যর্থতায় ১৭১ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস।
দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের হয়ে সোহেল সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন। আজহার ৩১ ও বাবর আজম করেন ২৯ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন নেইল ওয়াগনার, টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট। অপর উইকেটটি নেন অভিষিক্ত গ্রান্ডহোম।
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে মাত্র ২০০ রানে গুটিয়ে গেলেও ৬৭ রানের মূল্যবান লিড পায় নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন রাভাল। ডি গ্রান্ডহোম ২৯, ওয়াগনার ২১ ও টিম সাউদি করেন ২২ রান।
পাকিস্তানের হয়ে রাহাত আলি চারটি এবং মোহাম্মদ আমির ও সোহেল খান তিনটি করে উইকেট নেন। স্পট-ফিক্সিংয়ের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর এটাই আমিরের সেরা বোলিং ফিগার (৩/৪৩)।
বৃষ্টির কারণে প্রথম দিন পুরো ভেস্তে যাওয়ার পর শুক্রবার টেস্টের দ্বিতীয় দিন টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ৫৬ রান তুলতেই চার শীর্ষ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় মিসবাহর দল। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসে ১৩৩ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস।
পাকিস্তানের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা মিসবাহ প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন। আর কোনো পাক ব্যাটসম্যান ২০’র কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। সামি আসলাম (১৯), আজহার আলি (১৫), বাবর আজম (৭), ইউনিস খান (২), আসাদ শফিক (১৬) ও সরফরাজ আহমেদ (৭)- সবাই ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন।
পাকিস্তানকে ধসিয়ে দিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অভিষিক্ত বোলার গ্রান্ডহোম। মাত্র ৪১ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের হয়ে কোনো বোলারের অভিষেকে এটাই সেরা ফিগার। সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাত্র অষ্টম বোলার হিসেবে অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন গ্রান্ডমোর। এছাড়া কিউইদের হয়ে বোল্ট ও টিম সাউদি করে উইকেট নেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালের পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একবারও টেস্ট সিরিজে হারেনি পাকিস্তান। ২০১১ সালে মিসবাহর অধীনেই কিউইদের ১-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে পরাজিত করে দলটি। তবে এবার হারের শঙ্কার মুখে পড়েছে পাক শিবির।