প্রতিবেদন দাখিলে দুই দিন সময় পেলেন এসপি

 In লিড নিউজ

মেয়েদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামের কৃষক শাহানুর বিশ্বাসের উপর হামলাকারীদের  কারাবন্দি করার বিষয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময় পেলেন ঝিনাইদহের এসপি।

গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্ট ২৭ নভেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত  প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রতিবেদন দিতে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২৯ নভেম্বরের মধ্যে ঝিনাইদহের এসপিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আগামি ২৯ নভেম্বর এবিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার শাহানুর বিশ্বাসের ওপর হামলাকারীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কারাবন্দি করতে স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দেন বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওইদিন আদালত ২৭ নভেম্বরের মধ্যে আসামিদের কারাবন্দি করার বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

কৃষক শাহানুর বিশ্বাসের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে শারমিন আক্তার যশোর সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে সন্মান শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছেন। ছোট মেয়ে শাহানাজ আক্তার স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের আসা যাওয়ার পথে ওই গ্রামের মাহাবুব মেম্বারের (সাবেক) বখাটে ছেলে আজম ও তার সহযোগীরা বিরক্ত করে আসছিল। এ নিয়ে গ্রামে কয়েকজনের কাছে বিচার দেন শাহানুর। বিষয়টি নিয়ে ক্ষিপ্ত হন মাহাবুব ও বর্তমান মেম্বার কামাল।

গত ১৬ অক্টোবর সকালে রাজমিস্ত্রির সন্ধানে বাসা থেকে বের হন শাহানুর। কিছুদূর যাওয়ার পরই তার পথ রোধ করে দাঁড়ান মাহাবুব, কামাল, আজম, হাসান, মোতালেব, বিল্লাল, জাহিদ, ইমদাদুল, দুখু, কালামসহ আরও অনেকে। তারা মাঠের জমিজমার বিষয় নিয়ে শাহানুরের সঙ্গে তর্কে জড়ান। তর্কের এক পর্যায়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয় শাহানুরের দুই পা। এখানেই তারা ক্ষান্ত হননি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর জখম করা হয় শরীরের বিভিন্ন অংশ। পরে শাহানুরকে মৃত ভেবে ফেলে যাওয়া হয়। স্থানীয় অনেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরও মারপিট করার হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিএনপির কর্মী আখ্যা দেওয়া হয় শাহানুরকে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

একপর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা শাহানুরের দুই পা কেটে ফেলেন। তিনি বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার একদিন পর শাহানুরের ভগ্নিপতি ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে ঝিনাইদহ আমলি আদালতে মামলা করেন। এতে নলভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন একই গ্রামের বিল্লাল হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, ইমদাদুল ইসলাম, হাসান আলী, মোতালেব হোসেন ও টুকু মিয়া। ১৬ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি করেন শাহানুরের ভাই মহিনূর। মামলার এক নম্বর আসামি মো. কামাল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। তিনি নলভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্ট আসামিদের কারাবন্দি করার নির্দেশনা দেওয়ার পরদিন ১ নম্বর আসামি কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনসহ ১৪ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্য আসামিরা হলেন ৩নং আসামি আব্দুল মজিদের ছেলে কোরবান আলী, ৪নং আসামি সৈয়দ আলীর ছেলে মাহাবুব বিশ্বাস, ৫নং আসামি মাহবুব মেম্বারের ছেলে আজগর আলী, ৬নং আসামি আছির উদ্দিনের ছেলে মোতালেব, ৮নং আসামি আবুল তালেব, ৯নং আসামি ইদ্রিস আলীর ছেলে হাসান, ১০নং আসামি আবু বক্করের ছেলে বিল্লাল, ১১নং আসামি ইয়াকুব আলীর ছেলে জাহিদ হোসেন, ১২নং আসামি রুহুল আমিন, ১৩নং আসামি শিপন ওরফে দুখু, ১৪নং আসামি ইমমাদুল, ১৫নং আসামি আরিফ হোসেন ও ১৬নং আসামি বিপ্লব। তাদেরকে বুধবার সকাল ১১টায় আদালতে নেওয়া হলে জুডিয়িশাল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় (কালীগঞ্জ আদালত) কাজী মো. আশরাফুজ্জামান তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নিদের্শ দেন।

এছাড়া ঘটনার সময় মামলার ২নং আসামি নলভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে আজাদুর রহমান আজাদ ও ৭নং আসামি মোতালেব বিশ্বাসের ছেলে লিখনকে পুলিশ আটক করে। আজাদ কারাগারে আর লিখন জামিনে রয়েছেন।

Recent Posts

Leave a Comment