চবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ

 In শীর্ষ খবর

ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার ও বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

সচেতন ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যানারে রোববার ভোর ছয়টা থেকে দিয়াজের অনুসারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। অবরোধের কারণে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্লাস হয়নি।

পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো—দিয়াজ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে দ্রুত অপসারণ ও চাকরিচ্যুতকরণ, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, সব আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, পূর্বের ময়নাতদন্ত বাতিল করে পুনরায় ময়নাতদন্ত, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

চবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মামুন বলেন, পাঁচ দফা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। দাবি-দাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা, দিয়াজ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির অপসারণ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাবার ঘোষণাও দেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, দিয়াজ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে দ্রুত অপসারণ এবং চাকরিচ্যুত করার দাবিতে আমরা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি। তিনি অবরোধ কর্মসূচিতেও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন।

এদিকে, অবরোধের কারণে রোববার সকাল থেকে চবিমুখী কোনো শাটল ট্রেন যাতায়াত করনি। ষোলোশহর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. শাহাবুদ্দিন জানান, সকাল থেকে অবরোধকারীরা শাটল ট্রেনটি অবরোধ করে রেখেছে।

উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্য উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ কামরুল হুদা। তিনি বলেন, দিয়াজের ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। আমরাও চাই, দিয়াজের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

গত ২০ নভেম্বর রাতে চবি ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ২২ দিন আগে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে।

চবি ক্যাম্পাসে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ভবন নির্মাণের দরপত্রকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আড়াই মাস ধরে একের পর এক পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ছয়বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

এদিকে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকেরা। তবে এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে দিয়াজের পরিবার। এছাড়া চবি ছাত্রলীগের একটি অংশ বলছে, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনের সঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই।

এ ঘটনায় দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদি হয়েছে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দিয়াজকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ছাত্রলীগের নয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শিপলু কুমার দে’র আদালতে মামলাটি করেন তিনি।

Recent Posts

Leave a Comment