চলতি সমাজ-উন্নয়নের ‘গরল’ কথা

 In খোলা কলাম

প্রথমেই যেটি বলতে চাই, তা হলো দীর্ঘ কয়েক দশকে বাঙালির চিন্তা ও উন্নয়নের বিকাশ সম্পর্কটি। বাহ্যিক জগতে এখন প্রচুর সম্প্রসারণ চোখে পড়ে। আলোঝলোমল ইলেকট্রিক বাতি, উঁচু উঁচু অট্টালিকা, প্রাইভেট সেক্টরের কর্মযোগী জনতা, কর্পোরেট প্রযুক্তির প্রসার, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, শিক্ষালয়-বিদ্যানিকেতন অনেক কিছু অনেক আদলে গড়ে উঠেছে। চোখের ধাঁধানি ব্যাকুল করে তুলেছে সবকিছু। মানুষজন এসব কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে ব্যস্তও হয়ে পড়ছে। ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’-মার্কা কর্মগতিতে মানুষ এখন গতিহারা, দিশেহারা। অনেকদূর পর্যন্ত রাস্তাঘাট হওয়ার কারণে, দূরত্ব কমেছে; মোবাইল প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ এখন কাছের।

ফলে, ‘ঘর হইতে আঙিনা বাহির’ প্রচল কথাবার্তা এখন ভুলতে বসেছে। প্রান্তিক পর্যন্ত, স্যাটেলাইটের প্রভাব চলছে। দূর মফস্বলেও অট্টালিকা, গৃহফিটিংস ছাড়া বিকল্প কিছু ভাবছে না মানুষজন। অর্থাগম এখন নানামাত্রিক। চোরাইপথে, সুদের ব্যবসায়, কালোবাজারিতে, মধ্যস্বত্ব পুঁজিতে কেউই তেমন পিছিয়ে নেই। রাজনৈতিক ব্যবসাদাররাও বহুমুখি কর্মে ব্যস্ত। এখন এই ব্যস্ততা কতোটুকু উন্নতির চিহ্ন, সত্যিকারের উন্নতির মাপকাঠিই বা কী বোঝা দায়। আমাদের গার্মেন্টস শিল্প বা প্রবাসীদের অর্থ জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি দিচ্ছে, আর্থিক স্বচ্ছলতাও দিচ্ছে কিন্তু মানবসম্পদ বা উন্নয়ন রেখাটি কী তাতে সাফল্যের সূচক স্পর্শ করেছে! এসব প্রশ্ন অর্থনীতিবিদরা করতে পারেন, ভালো উত্তরও তাদের কাছে হয়তো আছে। কিন্তু আমি এইসব উন্নয়ন বৃত্তের ভেতরে থেকে মানুষ ও সমাজ-সংস্কৃতির অবস্থানটুকু চিনে নিতে চাই।

আমরা একসময় সামন্ত (feudal) সমাজে বাস করতাম। তখন, ‘বারো ঘর এক উঠোন’ ছিল। পারস্পরিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল দৃঢ়। লেনদেনের সঙ্গে, মন আর অন্তরের স্নেহার্দ্রটুকু বিযুক্ত ছিল না। একে অন্যের মর্যাদা রেখে সম্মান দিয়ে সমাজে চলাফেরা চলতো। মূল্যবোধের অনস্বীকার্য স্তরগুলো সকলেই মেনে নিতো। ভেতরে-বাইরে আবেগের তুল্যমূল্যে নয়, যার যা প্রাপ্য সেরূপেই প্রাপ্য পাওনাটুকু সবাই পেত। কিন্তু সেসব তো পুরনো কথা। আর সমাজ তো এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে না। একই সামাজিক সম্পর্ক সর্বদা মানুষের মধ্যে বিরাজমানও হয় না।

তাই এক সময় সমাজ পাল্টে, সম্পর্কগুলো বদলায়। প্রয়োজনগুলোও নানা সূত্রে আটকায়। কিন্তু আমাদের সমাজের পাল্টানোর স্বরূপটা তো স্বাভাবিক থাকে না। স্বাভাবিকভাবে তা হয়ও না। বৃটিশ উপনিবেশে তার স্বরূপ একরকম, ফলে সেখানকার পুঁজির চলকগুলো একরকম, পরে পাকিস্তানি নতুন উপনিবেশ নামক যাঁতাকলে মানুষ যখন পিষ্ট তখন পুঁজির আরেক রূপ ধারণ প্রভৃতি। কারণ, রাষ্ট্রের শ্রেণিচরিত্র সেখানে কখনো শোষক, কখনো শাসকের লেজুড়বৃত্তি করে। রাষ্ট্রীয় আবর্তে পুঁজি নানারকম অসুস্থ ও বিকৃত শ্রেণি তৈরি করে। বাড়ন্ত মানুষকে দুমড়ে ফেলে। বিকৃত ভাবে ব্যক্তিমানুষকে বাড়তে সহায়তা দেয়। ভেতরে ভেতরে অসুস্থ করে ফেলে। এক একটা বিকারের জন্ম দিয়ে মনুষ্যশক্তি নিরর্থক করে ফেলে।

এ ধারাটা পাকিস্তানে চলে ব্যাপকভাবে এবং অসাধুরূপে দুর্বৃত্তায়নের ভেতর দিয়ে। কারণ, এ অঞ্চলের ন্যায় ও প্রগতির আন্দোলন রুদ্ধ করার জন্যে। পাকিস্তানি রাষ্ট্রশক্তির উদ্দেশ্যই ছিল তাদের এদেশীয় চর সৃষ্টি করে সমস্ত ইতিবাচক ও ন্যায়ভিত্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেয়া। ফলে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, নুরুল আমিন, মোনেম খানের মতো চরিত্র জনসমাজে গজিয়ে ওঠা সহজ হয়। কিন্তু স্মরণীয়, ঠিক এর বিপরীতেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বটি তৈরি হয়। ছয়দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিটি তখনকার এদেশীয় রাষ্ট্রীয় চরদের পছন্দ হয়নি। কারণ, তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের লেজুড়বৃত্তি করে স্বীয় ক্ষমতা, ব্যক্তিস্বার্থ, অর্থ ও পুঁজি করায়ত্ত করেছিল। এতে করে তাদের সামাজিক সুবিধা ভোগ করাও সহজ ছিল।

তাদের আচরণের ভেতরেই দ্বিধান্বিত সংকট জোরাল থাকলেও নিজের কালিমালিপ্ত বিকারকে প্রাধান্য দিয়ে উর্দুভাষিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সামাজিক অবস্থানটি পাকাপোক্ত করতে অসুবিধা হয়নি। এক্ষেত্রে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ও প্রান্তিক জনতার মৌলিক দাবিও তাদের কাছে প্রত্যাখাত হয়। যেটি আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক পুঁজির পূর্বাপর যে আধা-সামন্ত কাঠামো তাতে আরও নতুন বিকার তৈরি করে। মধ্যস্বত্ব পুঁজিপতিদের প্রভাব তৈরি হয়। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করে অনেকেই রাতারাতি বড়লোক হয়।

ড্রয়িংরুমের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আরাম-আয়েশ আর ভোগবাদিতার পাশাপাশি দেয়ালে লটকাতে থাকে আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘গণতন্ত্র মার্কা’ ছবি। এভাবে ন্যাক্কারজনকভাবে গলিত পচা বাসি সংস্কৃতির অপচর্চায় ড্রয়িংরুম যখন আচ্ছন্ন তখন পূর্ব-বাংলায় শহরকেন্দ্রিক আবেগচঞ্চল নিম্নমধ্যবিত্ত সংস্কৃতির শক্তি একতাবদ্ধ হয়। ভাষা আন্দোলনই শুধু নয়, মুসলিমলীগের বিপরীতে জয় ছিনিয়ে আনে এবং আরও একটু পরে ছয়দফায় এক হয়। এরপরের ইতিহাস তো আরও স্পষ্ট। কিন্তু বুর্জোয়া যে চলটি শুরু হলো তা পরে অধিকার করে নিম্নমধ্যবিত্তের ভেতর থেকে প্রান্তিক মানুষের নেতৃত্ব দানকারী একটি অংশ। যারা একাত্তরের পরে ওই একই অভিব্যক্তিতে উদ্ভাসিত হয়। বাংলাদেশেও পুঁজির সম্প্রসারণ যথাযথ হয় না। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ চুরচুর করে ধ্বসে পড়ে।

পাকিস্তানি আমলে যে বুর্জোয়া পৃষ্ঠপোষকতা তারই এক ধরনের অসংস্কৃত বস্তাপচা গলিত সংস্করণ নির্মাণে এদেশও পিছিয়ে থাকে না। এর সাংস্কৃতিক ভিত্তি যেমন দুর্বল তেমনি তার প্রতিক্রিয়াশীল রূপটাও প্রকট। সেখানে দুষ্ট রাজনীতি আর নীতিহীনতার সংস্কৃতিই তৈরি হয়। ফলে স্বাধীনতার পরে স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার জন্য খুব বেশি সময় নিতে হয়নি। যে বাংলা ভাষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রাণ দেয় তখন এদেশেরই কিছু সন্তান পুঁজির লেজুড়বৃত্তি করে ব্যক্তিস্বার্থের ধারা এগিয়ে নেওয়ার জন্য শাসকের সম্পৃক্ততায় নিবিষ্ট থাকে। তারাই পাকিস্তানি চরদের মতো একইরূপে আবির্ভূত হয়, এই স্বাধীন বাংলাদেশেও। এরাই পরবর্তীতে কেউ ধর্মভিত্তিক দল গড়ে, কেউবা তথাকথিত বামপন্থার নামে নিজেদের ভাগ্য গোছানোয় প্রবৃত্ত হয়। অথচ, এই শ্রেণিটিই সাতচল্লিশের পরে কোনো না কোনো অংশে প্রগতিশীলরূপে অধিষ্ঠিত ছিল। তারাই এদেশের জনভিত্তিক আন্দোলনের অভিমুখ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।

এসব কথাগুলো মোটা দাগের মনে হলেও ক্ষমতাকেন্দ্রিক অবমাননাকর সংস্কৃতির বর্তমান রূপটিও একই ধারার সাথে সংশ্লিষ্ট। ফুলে ফেঁপে ওঠা রূপটুকু কী এখন আমাদের নজরে আসে না! আমরা যখন হিসেব করি, স্বাধীনতার পর এদেশে কোটিপতি কতোজন ছিল আর এখন পঁয়তাল্লিশ বছর পরে কতোটা হয়েছে হিসেবটা কী দাঁড়ায়? কাজেই, একপ্রকার ভুইফোঁড় যে শ্রেণি এখন গড়ে উঠেছে আমাদের সম্মুখে তা ধর্মে-সংস্কৃতিতে জীবনাচরণে মারাত্মকরকম বেসুরো আর কপালগুণে তারই লেজুড়বৃত্তি চলছে এখনকার তথাকথিত উন্নয়নসূচকের রেখাচিত্রে।

‘তুঘলকি’ ক্ষমতার নামে যারা দিনেদুপুরে হঠাৎ করেই বনে যাচ্ছে কোটিপতি। ক্রমাগত, দম্ভে-অহংকারে সমস্ত শক্তির কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চেঁচিয়ে ঘোষণা করছে ‘এদেশ আমাদের, আমরাই সবকিছু’ ফলে নীতি মূল্যবোধ সম্মান আর ছোটবড় ভেদ কিছুই থাকছে না, মুখ্য হয়ে উঠেছে নীতিহীন শিষ্টাচারহীন তথাকথিত রাজনৈতিক নামধারী পরিচয়। আর এই লোকদেখানো রাজনীতির অপ-সংস্কৃতিই তাদের পুঁজি। ক্ষমতায় উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে; তৃপ্তির ঢেকুরে অস্থির করে তুলছে গোটা সমাজকে। এতে বিষিয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। কার্যত, কী পুঁজি কী রাজনীতি কোনোটিরই মৌলিক কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর ইতিবাচক তো নয়ই।

এমনটা তো সত্য, বাংলাদেশে বর্তমান সমাজের ভেতরে পার্থক্য ও ফারাক তুমুলভাবে বেড়েছে। ক্রমশ অর্থ-প্রতিপত্তির প্রভাব নিম্ন-মধ্যবিত্ত স্তরে বেড়েছে। তাদের অর্থাগমের সূত্র দুটো উপায়, ১) কর্পোরেট চাকরি ও বাণিজ্য ২) বিশ্বাস করতে না চাইলেও এটা অসত্য নয় যে, দুর্নীতির আগ্রাসী রূপ এখন অহমিকার অধিকারী রূপ ধারণ করেছে। এ বিপুল আগ্রাসনে নৈতিক চরিত্র ও জীবনের সততার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে। কিন্তু এর সমাধান দেখা যাচ্ছে না। শাস্তির বিধানের প্রয়োগ একেবারেই নেই। ভোগবাদকে উস্কে দিচ্ছে, উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবণতা প্রবল। কর্পোরাল পুঁজি দুর্বৃত্ত-পুঁজিকে পাওয়ার সব ফাঁদ পেতে রেখেছে। ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্য অনেক কিছু করতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়ে পড়ছে। সাঁড়াশিভাবে তা দমনের পদক্ষেপ নেই। সেখানে নিত্য নৈমিত্তিক হাবুডুবু খাচ্ছে সাধারণ সব চরিত্র।

প্রান্তিক মানুষরা অসুখকে জয় করে প্রাণান্ত পরিশ্রম করে। সারল্য তাদের প্রাণ। কর্ম তাদের নেশা। হরতাল-অবরোধ আর অনাস্থার রাজনীতি তাদের টলাতে পারে না। কর্মময় প্রাণ নিয়েই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে। অশ্রদ্ধা করে রাজনীতিবিদদের স্পর্শ থেকে দূরে থাকে। পরিবারে, সমাজে যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেখে তা নির্বিচারে মেনে নিয়েই কাজে যোগ দেয়। কারণ, কাজ ছাড়া বাঁচার বিকল্প তাদের সম্মুখে কিছু নেই। তারা চলতে চায়। প্রতিকূলতার ভেতর দিয়েই চলতে চায়। প্রতিবন্ধকতা আসলে তবুও। এটি প্রকৃতপক্ষে কাজে লাগাতে পারলে অনেক কিছু দ্রুত ঘটার সুযোগ ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। প্রান্তিক এসব মানুষ ছাড়া, বাংলাদেশের অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি রেমিট্যান্স।

বিদেশের মাটিতে প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে, এদেশের মানুষরা। তাদের স্বোপার্জিত অর্থ এদেশের অপর চালিকা যোগান। এছাড়া আমরা সকলেই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কথা জানি। প্রাইভেটাইজেশান ঘটেছে যে মাত্রায় সেখানে এখনও নিম্নমধ্যবিত্ত সেক্টর তেমন অকার্যকর হয়নি। মধ্যবিত্ত পর্যায়ে তাদের সামাজিক মর্যাদা উঠে আসছে। এক্ষেত্রে মেয়েদের পর্যাপ্ততা আকর্ষণীয়। নিঃসন্দেহে তা আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে এটিই বড় আশার সংবাদ। ‘জনসংখ্যাই জনসম্পদ’ নামে যে টার্মটি নিয়ে কথা হচ্ছে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তা সফলতার মুখ দেখতে পারে এদেশের শিক্ষিত মেয়েদের কল্যাণে। তাদের অসীম ধৈর্য্য ও সাহসিকতার কারণে। এটি একটি অগ্রবর্তী খাত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিশেষ করে, মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পঠন-পাঠনে মেয়েরা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফল আগামী দশকেই লক্ষণীয় হবে। কিন্তু সামষ্টিক জনগোষ্ঠীর মান ও কল্যাণ তো শুধু কিছু মানুষের কর্মস্থান বা চাকরি পাওয়ার ওপর নির্ধারণ করে না। সামষ্টিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্মান ও দেশাত্ম চেতনার উপর তা অনেকটাই নির্ভরশীল। সেটি মৌলিক বিষয়। তা ব্যক্তিমানুষের ভেতরে প্রভাবিত হচ্ছে কম, চর্চাও কম। বর্তমান বাজারে দেশপ্রেম কথাটা রসিকতার পর্যায়ে গণ্য হয়ে চলছে। আর এটি যে হারে পড়াশোনা বাড়ছে সে হারে মানুষের ভেতরে সংক্রমিত হচ্ছে না।

ব্যক্তির স্বার্থ প্রধান হয়ে উঠছে। ব্যক্তি বিচ্ছন্নতা বা পরিবারে যে অসহায়ত্বের কথা আমি গোড়াতেই বলেছি, সে কারণে আমাদের দেশপ্রেম ভাবনা, নীতির প্রশ্ন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। বরঞ্চ বিপরীতে ধর্মান্ধতা বাড়ছে। যুক্তি পরিস্কার না হওয়ায় একদিকে ভোগবাদের প্রবণতা যেমন বাড়ছে তেমনি ধর্মান্ধতার বেড়াজাল থেকেও তার মুক্তি ঘটছে না। এর ফলে যে বৃত্তটি সমাজে চোখে পড়ছে, তাতে ক্ষমতাই মুখ্য। মূল্যবোধ নেই। অসাম্য পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। বিচ্ছেদ বাড়ছে। দেশপ্রেম কমছে। তাহলে সমীকরণটি কী দাঁড়ায়!

সাংস্কৃতিক ক্ষয় ও বিনাশ যে মানুষটির ভেতরে রচিত হচ্ছে, সে বাইরের দিকে অনেক কিছু দেখছে, পাবার আশাও বাড়ছে কিন্তু ভেতরে শান্তি পরাহত। ফলে, সন্ত্রাস-ফ্রাস্ট্রেশান-হীনন্মন্যতা বাড়ছে। এই জায়গা থেকে আমাদের উঠে আসা জরুরি। এর জন্য সর্বস্তরের সদিচ্ছা প্রয়োজন। এ সদিচ্ছাটা নীতি এবং মূল্যবোধের যা এক পর্যায়ে সাংস্কৃতিক শক্তিতে পর্যবসিত হতে পারে। এই শক্তিই আমাদের সম্মুখে টেনে নিতে পারে। পেছনের টানটুকু আরও পেছনে সরিয়ে পজেটিভ দ্বিধাটুকু সম্মুখের দিকে নিতে পারে।

এজন্য সবার আগে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, সে নেতৃত্বই পারে সবকিছু সহজ করে তুলতে। স্বাভাবিক পথে পরিচালিত করতে। কিন্তু সে নেতৃত্বটি থাকা তো জরুরি।

শহীদ ইকবাল : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
shiqbal70@gmail.com

Recent Posts

Leave a Comment