তিন রাজ্য যার, হোয়াইট হাউস তার

 In দেশের ভেতর

 

বলা হচ্ছে নির্বাচন হবে মাত্র তিনটি রাজ্যে।ফ্লোরিডা, নিউ হ্যাম্পশায়ার আর নর্থ ক্যারোলাইনায়। আর বাদ বাকি রাজ্যে নির্বাচনের অবস্থান প্রায় পরিষ্কার। এই তিনটিতেই অবশ্যই জয়ী হতে হবে ট্রাম্পকে, সঙ্গে নিতে হবে মিশিগান অথবা নেভাডা অথবা পেনসিলভেনিয়া। যার সবগুলোতেই ৩ থেকে ৫ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন হিলারি। সহজ হিসাব বলছে, ট্রাম্পের জন্য এই বৈতরণী পার হওয়া অসম্ভব। তবে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে অসম্ভব সম্ভব হওয়ার ভয় রেখে শুরু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন।

৭ নভেম্বর নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা আগের ইলেক্টোরাল ম্যাপে রিপাবলিকান সর্মথনপুষ্ট প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজের হিসাব, হিলারি পাচ্ছেন ন্যূনতম ২৭৪ ইলেক্টোরাল ভোট। আর জয়ের জন্য তার দরকার তার ২৭০টি।

অন্যদিকে কয়েকটি রাজ্যে উন্নতি করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘরে আছে সর্বমোট ২১৫টি ইলেক্টোরাল ভোট। বাকি ৪৯টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে হচ্ছে লড়াই। যার সবগুলো পেলেও ২৭০ এর ঘরে পৌঁছাতে পারবেন না ট্রাম্প।

ফক্স নিউজ বলছে, এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয় পেতে হলে রং বদলাতে হবে নেভাডার অথবা পেনসিলভোনিয়ার। আর সঙ্গে ফ্লোরিডাসহ ৩ রাজ্যেই তাকে জয়ী হতে হবে।

এদিকে, অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ প্রচারমাধ্যম সিএনএন সম্প্রতি প্রকাশিত সবগুলো জরিপের গড়পড়তা মূল্যায়ন করে দেখাচ্ছে হিলারি প্রতিটিতেই এগিয়ে আছেন ৩ থেকে ৬ শতাংশ ব্যবধানে।

মরণকামড় দিতে হলে যে কয়েকটি সম্ভাব্য রাজ্যে জয়ের কথা ভাবছে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন, মিশিগান তার অন্যতম। সেখানে হিলারি সর্বশেষ এগিয়ে ৪ শতাংশ ভোটে। একই চিত্র পেনসিলভেনিয়াতে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে হিলারি এগিয়ে ৩ শতাংশ ভোটে। অথচ হোয়াইট হাউসে প্রবেশের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সবগুলোতেই জয়ী হতে হবে।

সিএনএন বলছে ট্রাম্প যদি ব্লু বা ডেমোক্রেট রাজ্য পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান আর উইসকনসিন এই তিনটিতেই জয় পান আর হিলারি যদি শুধু ফ্লোরিডা আর নিউহ্যাম্পশায়ারে জয় পান তাহলে তিনিই প্রেসিডেন্ট। হিসাবটা এরকমই জটিল ট্রাম্পের জন্য।

তবে এখনও রিপাবলিকান পন্ডিতরা শেষ মুহূর্তের ভরসা নিয়ে বসে আছেন যে অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেটা হলো বর্তমানের সবগুলো ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্য অর্থাৎ ফ্লোরিডা, নিউহ্যাম্পশায়ার আর নর্থ ক্যারোলাইনার সঙ্গে পেনসিলভেনিয়াতে জয় তুলে নেবেন। যদি ডেমোক্রেট বিশেষত আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটাররা কেন্দ্রে না যান।

‘পেনসিলভেনিয়াতে ডেমোক্রেট দলের মেশিন এতটাই সক্রিয় যে ভোটারদের ঘর থেকে বের করে টেনে হিঁচড়ে তারা নিয়ে যায় ভোট কেন্দ্রে। এবার সেটা দেখা গেলে অর্থাৎ ব্যাপক ভোট পড়লে হিলারি জয়ী হবেন, নাহলে ট্রাম্প জয় তুলে নিতে পারেন’- বলছিলেন ফক্স নিউজের সিনিয়র বিশ্লেষক বিল ও রেলি।

সেজন্য শেষ মুহূর্তে ঐ চারটি রাজ্যেই ঘুরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর বলছেন, দেশের ভাগ্য বদলানোর দায়িত্ব এখন ভোটারদের হাতে।

‘দেখছেন তো অবস্থা সবই, এখন সব কিছু আপনাদের হাতে। হিলারি নির্বাচিত হলে অভিবাসী দিয়ে ভরিয়ে দেবে দেশ আর দেশের সব ভোট। বিচারক নিয়োগ করে আইনে পরিণত করবে আমেরিকানবিরোধী সব বিল আর অধ্যদেশ। তখন আমেরিকানদের আর সুযোগ থাকবে না উঠে দাঁড়ানোর মতো’ – ফ্লোরিডা থেকে নিউহ্যাম্পশায়ার সব খানেই এই আকুতি প্রকাশ করছেন ট্রাম্প তার মূল ভোট ব্যাংক হোয়াইট আমেরিকান বা সাদা ভোটারদের কাছে।

২০১৬ সালের ৬ জুলাই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতার যাত্রা শুরু করেছিলেন প্রতিবেশী মেক্সিকোর নাগরিকদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে। এরপর সেটি ছড়ায় চীন থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। বিভেদ আর হিংসা ছড়িয়ে নিজে প্রতিদিন ছিলেন গণমাধ্যমের আলোচনায়। তবে এর বাইরে তার ব্যক্তিগত নানা ইস্যু, নারী অবমাননা আর নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেওয়া না নেওয়া নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে ভরপুর তার এই শেষ দিনের প্রচারণা।

অন্যদিকে নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পিছু ছাড়েনি তার ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার সংক্রান্ত ইস্যু। এর বাইরে সময়ে অসময়ে তার মুখ থেকেও বেরিয়েছে বেফাস মন্তব্য। তবে সব ছাড়িয়ে এখন ৮ নভেম্বর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হিলারি ক্লিনটন আর ডেমোক্রেট শিবির। শেষ দিনের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বের হওয়ার সময় তিনি বলছিলেন, জয় পেলে দেশকে আবার এক সুতোয় বাধার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করবেন তিনি।

‘আমেরিকার সবচেয়ে ভালো দিনগুলো সামনে অপেক্ষা করছে। এখনও হয়ত অনেকেই ভাবছেন ভোট দিয়ে কি হবে, দুজনই সমান। তাদের জন্য বলছি, অবশ্যই দুটি আলাদা পক্ষ আছে। একটি এগিয়ে নেওয়ার একটি পিছিয়ে দেওয়ার। একটি অন্ধকারের, অন্যটি প্রত্যাশার’-বলছিলেন হিলারি। এসময় হিলারি প্রতীজ্ঞা করেন, যদি ভোটাররা ৮ নভেম্বর তাকে নির্বাচিত করেন তাহলে তার প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিটি দিন তিনি তরুণদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির কাজ করবেন।

এদিকে নির্বাচনের একদিন আগে অন্যতম ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্য নিউহ্যাম্পশায়ারে এক নির্বাচনী র‌্যালিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা শেষবারের মতো ভোটারদের বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সবদিক দিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের অযোগ্য। তিনি বলেন, তার কার্যক্রম এবং কথাবার্তা পৃথিবীর অন্য কোথাও হলে মানা যেত, কিন্তু আমেরিকায় নয়। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য দেশ, এখানে অসভ্যরা তোমাদের মাথার উপরে থাকতে পারে না। এসময় রাগান্বিত ওবামা বলেন, ট্রাম্পের বন্ধু পুতিন তার আচরণকে সায় দিতে পারে কিন্তু আমেরিকা দিতে পারে না।

এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার উত্তরসূরী নির্বাচনের জন্য যে পরিমাণ নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন তা যুক্তরাষ্ট্রের গত ৫০ বছরের ইতিহাসে বিরল। সম্ভবত এর আগে কোনো প্রেসিডেন্টের এতটা বেশি গ্রহণযোগ্যতা ছিলেন না ক্ষমতার শেষ দিনগুলোতে। ওবামা তাই মানুষকে বলছেন, ভোট দিতে যান, কেননা, ওখানেই আপনারা সিদ্ধান্ত দেবেন, আমি আমাদের জন্য কি করেছি, আর সেটা আপনাদের জন্যেই যদি করে থাকি, সেই কাজ আরো এগিয়ে নিতে হিলারির চেয়ে যোগ্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এই দেশে আর আসেনি কোনোদিন।

Recent Posts

Leave a Comment