রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাতীয় পার্টির সংলাপ : পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব

 In জাতীয়

 

পাঁচজনের তালিকা হস্তান্তর * চলতি সংসদেই কমিশন গঠনে আইনের দাবি * পাঁচ দফা প্রস্তাবনা পেশ

ইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল -যুগান্তর

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটির প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন দলটি এ লক্ষ্যে পাঁচজনের একটি তালিকাও রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেছে। এর বাইরে বর্তমান সংসদেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন দলের নেতারা।

এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের বিষয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে জাতীয় পার্টি। প্রস্তাবনাগুলো হল : সংবিধান অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন নিয়োগসংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন; নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা; নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন; বর্তমান সংসদেই এ আইন পাস করা ও নির্বাচন কমিশনারদের বিষয়ে নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিগত একাগ্রতা ও সততা, ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স, পেশাগত যোগ্যতা, নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকা, অন্য অফিসে নিয়োগে বিধিনিষেধ ও চারিত্র্যিক স্বচ্ছতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। মঙ্গলবার

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত সংলাপে রাষ্ট্রপতির কাছে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরে। প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বৈঠকে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার নিয়েও কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আমন্ত্রণে সাড়া দেয়ার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।’ ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি রূপরেখা বেরিয়ে আসবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেছেন।’

জানা গেছে, বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে শুরু হয়ে বৈঠক চলে ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। এর আগে দুপুর আড়াইটায় দলীয় কার্যালয়ে আসেন পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদসহ দলের শীর্ষ নেতারা। পৌনে ৩টায় প্রতিনিধিদল নিয়ে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন তিনি। ১৮ সদস্যবিশিষ্ট এ প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন : জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পানিসম্পদমন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমএ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশিদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ফখরুল ইমাম, এসএম ফয়সল চিশতী, এটিইউ তাজ রহমান এবং মেজর (অব.) খালেদ আখতার।

বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংলাপের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, সংলাপে পাঁচ দফাসহ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও তাদের নিজস্ব বাজেট প্রণয়নের ক্ষমতার বিষয় উঠে এসেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) যাতে স্বাধীন থাকে সে জন্য ইসির সচিব এবং কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের হাতে দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ইউনিয়ন-উপজেলা এবং সংসদসহ সব নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নিয়োগের একক ক্ষমতা তাদের হাতে দেয়া এবং সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে ইসিকে প্রশাসনিক ক্ষমতা দেয়াসহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে জাতীয় পার্টি।

নেতারা বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে তিন পৃষ্ঠার লিখিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় পার্টি মনে করে- আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাটি ১৯৩৫ সালের ব্রিটিশ ভারতের আইন অনুসারে চলছে। এ আইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে দলটির প্রস্তাব হচ্ছে- সংবিধান অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন নিয়োগসংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। এ বিধানে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনের আলাদা সচিবালয় থাকতে হবে। বর্তমান সংসদেই এ আইন পাস করতে হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব : রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে বিকালে কাকরাইলস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে জাতীয় পার্টি। এ সময় দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এবং আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তাতে আমরা আশাবাদী যে, দেশের চলমান রাজনীতি এবং জাতীয় নির্বাচনে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা এবং যে সংশয় ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা মুছে ফেলার পথ উন্মোচন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দল ও মতের পার্থক্য আদর্শগতভাবে ভিন্নতা থাকতেই পারে। তবে রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ সব দূরত্ব কমাতে যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে।’ এ সময় এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘গত ২৫ বছরে জাতীয় পার্টি জেল, জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন, মামলা, হামলা সহ্য করে সব ইসির সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও পার্টির চেয়ারম্যান নিজে জেলখানা থেকে দু’বার ৫টি সিটে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। আমরা গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় বিশ্বাস করি এবং দেশের সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আমাদের কাম্য।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এটাও বিশ্বাস করি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনীতিতে কেউ চির শত্রু নয়। আমাদের লক্ষ্য হল- দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দলগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব ও অনৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে তা কমিয়ে আনা। চলমান সংলাপ এ দূরত্ব কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারবেন। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, এসএম ফয়সল চিশতী, মশিউর রহমান রাঙ্গা, এটিইউ তাজ রহমান, হাফিজ উদ্দিন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, আলমগীর সিকদার লোটন, আরিফুর রহমান খান, জহিরুল ইসলাম জহির, সরদার শাজাহান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ইয়াহইয়া চৌধুরী এমপি, জহিরুল আলম জহির, কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মাহমুদ, ইসাহাক ভূঁইয়া, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, অন্যন্যা হোসাইন মৌসুমী, একেএম আসরাফুজ্জামান খান, খন্দকার নুরুল আনোয়ার বেলাল, সৈয়দ ইফতেখার আহসান, মিজানুর রহমান মিরু প্রমুখ।

Recent Posts

Leave a Comment