আবার জমবে মেলা

 In খোলা কলাম
কাজী সুলতানুল আরেফিন

আসছে অমর একুশের মাস। ভাষার মাস। বইমেলারও মাস। এ মেলা যেমন আমাদের ঐতিহ্য বহন করে, তেমনি আমাদের জ্ঞানপিপাসু হতেও উজ্জীবিত করে। বইমেলা এখন শুরু থেকেই জমজমাট থাকে। লোকসমাগম হয় প্রচুর। অনেক বইপ্রেমী দূরদূরান্ত থেকেও মেলায় ছুটে আসেন। তবে ইদানীং মানুষ খুব ব্যস্ত সময় পার করছে। আগের মতো বইপড়া অনেকেরই আর হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম পাঠ্যবই ছাড়া অন্য বইয়ের পেছনে সময় ব্যয় করতে আগ্রহী নয়। কারণ বই পড়তে যে সময় ব্যয় হয় তার চেয়ে কম সময় ব্যয় করে তারা আকর্ষণীয় বিনোদন সামগ্রী হাতের নাগালে পাচ্ছে।
একটা সময় ছিল যখন বই ছিল জ্ঞান আহরণ ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। মানুষ অবসর সময়ে বা বিনোদনের জন্য বইয়ের মধ্যে ডুবে যেত। পড়তে পড়তে মনের কল্পনায় নানা দৃশ্যপট তৈরি করত। কষ্টের কাহিনী পড়ে ব্যথিত আর সুখের কাহিনী পড়ে পুলকিত হতো। একটি ভালো বই এক পাঠক থেকে অন্য পাঠকের হাতে হাতে ঘুরে বেড়াত। বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে পড়া থেকে বইয়ের নেশা সৃষ্টি হতো; কিন্তু আজ বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে প্রযুক্তি নিয়ে মগ্ন থাকে। মানুষের কাছে এখন আর বিনোদনের মাধ্যমের অভাব নেই। আর সবকিছু হাতের নাগালে হওয়ায় মানুষের কাছে বইয়ের স্থান ক্রমশ পেছনে পড়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন বইয়ের পেছনে সময় ব্যয় করার চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে মনোনিবেশ করতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করে। রাতদিন ডুবে থাকে রঙিন দুনিয়ায়।
প্রযুক্তির মাঝে ডুবে থাকা দোষের কিছু নয়। তবে বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া একটি অশুভ লক্ষণ। কারণ পড়ার মাধ্যমেই মানুষের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। মনুষ্যত্ব বিকাশেও বইয়ের গুরুত্ব অসীম। অনেক লেখকের লেখা পাঠকের মনে ছাপ ফেলে। পাঠককে প্রভাবিত করে। প্রযুক্তি তার নিজের জায়গায় থাকবে, পাশাপাশি বইকেও তার নিজের আসন ধরে রাখতে হবে।
কোনো গোষ্ঠী বা ধর্মকে আক্রমণ করে বই প্রকাশ হওয়া উচিত নয়। লেখক তার লেখনী দ্বারা মানব মনের উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট হবেন, সংঘর্ষ সৃষ্টিতে নয়। তাই আমাদের হিংসা বা বিদ্বেষমূলক বই প্রকাশ করা থেকে বা পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ভালো ভালো বই প্রকাশ করতে হবে যাতে ভালো মানসিকতা তৈরি হয়। আর তা থেকে মানুষ সহজেই বুঝতে পারবে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল।
‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’ কথাটি সবার জানা; কিন্তু বই শুধু কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। অনেকে শখ করে বই কেনেন এবং তা না পড়ে সাজিয়ে রাখেন। এর মূল্য কী? বই লেখা হয় পড়ার জন্য, সাজিয়ে রাখার জন্য নয়। তাই আসুন আরেকটি উক্তি চালু করি : ‘বই পড়লে ক্ষতি হয় না’। আসুন বই কিনি, বই পড়ি। বইয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলি। প্রিয়জনকে বই উপহার দিই আর সেই সঙ্গে লেখকদের মূল্যায়ন করি।
কাজী সুলতানুল আরেফিন : প্রাবন্ধিক

Recent Posts

Leave a Comment