‘নিয়োগ পিছিয়ে দে নইলে বদলি করে দেব’

 In লিড নিউজ

ইউএনও’র বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ
‘দফতরি নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দে, নইলে একদিনের মধ্যেই তোকে বদলি করে দেয়া হবে। গাংনীতে কিভাবে কাজ করিস তা দেখে নেব। ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হবে। কাজ করতে হলে আমাদের কথা শুনতে হবে। মান-সম্মান থাকতে চলে যা।’

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ঢুকে এভাবেই তাকে হুমকি-ধমকি দেয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। রোববার বিকালে উপজেলার ৫৩টি স্কুলে দফতরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ দেয়ার জন্য ইউএনওকে শাসিয়ে যান সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন দলবল নিয়ে ইউএনওর কক্ষে প্রবেশ করে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ইউএনও আরিফুজ্জামান সোমবার দৈনিক যুগান্তরকে এমন অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে এমন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন যা তিনি মুখেই আনতে পারছেন না। এ ঘটনায় তিনি চরমভাবে নাজেহাল ও বিব্রত হয়েছেন।

এদিকে ইউএনওকে লাঞ্ছিত করার পর রোববার সন্ধ্যায় ওই কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারা ইউএনওকে অপসারণের জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে শহর ও উপজেলা চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

জানা গেছে, রোববার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশারফ হোসেন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন ছাড়াও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ইউএনওর দফতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে। এ সময় ইউএনও উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করছিলেন।

নিয়োগে দুর্নীতি হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে হঠাৎ করেই ইউএনওর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। তারা নিয়োগ প্রক্রিয়া পেছানোর দাবি করেন। ইউএনও আরিফুজ্জামান জানান, নিয়োগের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এমনকি তারিখই ঘোষণা করা হয়নি। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়োগ পিছিয়ে দেয়ার জন্য ইউএনকে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেন। পরে তাকে সরিয়ে দেয়ার আলটিমেটাম দিয়ে নেতাকর্মীরা হাসপাতাল গেটে এসে সমাবেশ করেন।

এ সময় তারা অভিযোগ করেন, মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার ৫৩টি প্রতিষ্ঠানে দফতরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের অর্থও লুটপাট করছেন বলেও অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখেন। উপজেলা চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন নির্বাহী কর্মকর্তার সব ধরনের দুর্নীতির অংশীদার বলে দাবি করেন নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি এমএ খালেক বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান গাংনীর মানুষের জন্য এক ক্ষতিকর ব্যক্তি। গাংনীর উন্নয়নের স্বার্থে যতক্ষণ তার অপসারণ না হবে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। উপজেলা চেয়ারম্যান মুরাদ আলীকে তিনি জঙ্গি নেতা দাবি করে বলেন, ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মিলে অনিয়ম করে চলেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তার কার্যালয়ে ঢুকে যেভাবে অপদস্থ করেছেন তা লজ্জাকর এবং সম্মানহানিকর। নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। দুর্নীতি ঠেকাতেই জেলা প্রশাসকের আদেশে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়া হচ্ছিল। নিজেদের দোষ আড়াল করতেই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে।

গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অফিসের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ নিয়োগ স্থগিত চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হলে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে যায়। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে দায়েরকৃত রিট পিটিশন বাতিল করে রায় প্রদান করেন হাইকোর্ট। এরই আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১০ জানুয়ারি নিয়োগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন স্ব স্ব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে।

Recent Posts

Leave a Comment