সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযান শুরু

 In বিশেষ প্রতিবেদন
বিমানসহ ৩ সংস্থার কাছে ১২ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে
সরকারের সেবাধর্মী সংস্থা ও দফতরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুদকের কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অভিযান চালানো হয়। দুদক কমিশনারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দুদক মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী ও আতাউর রহমান। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস পরিদর্শন শেষে কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, কাস্টমস হাউসের বিভিন্ন শাখা ঘুরে তারা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন। এদিকে একই দিন বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং ওয়াসায় অভিযান চালায় দুদক টিম। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বিমান, পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে ওয়াসা এবং পরিচালক মজনুর আহম্মদের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ অভিযান পরিচালনার সময় ওইসব প্রতিষ্ঠানে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধানদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয় বলে জানা গেছে। অভিযানের সময় তিন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া ওইসব প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রাম, নিয়োগ, টেন্ডার, কেনাকাটা ও বার্ষিক রিপোর্টসহ ১২ ধরনের তথ্য চেয়েছে দুদক টিম। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদের এই তথ্য সরবরাহ করতে সংস্থার প্রধানদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বেলা ১১টায় কুর্মিটোলায় বলাকা ভবনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যালয় পরিদর্শন করে দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক অনুসন্ধান টিম। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন উপ-পরিচালক শেখ আব্দুছ সালাম ও সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার। অভিযানের সময় তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন শাখা পরিদর্শন করে। এ সময় টিমের সদস্যরা প্রতিষ্ঠানটির অর্গানোগ্রাম, জনবল নিয়োগ, ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিধি ও ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনসহ ১২ ধরনের তথ্য জানতে চান। পরে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের কপি আগামী সাত দিনের মধ্যে সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানকে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিমানের এমডির সঙ্গে বৈঠককালে দুদক টিম তাদের কাজের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করে। বিকেলে মোসাদ্দেক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, দুদক আমার সংস্থার বিষয়ে যেসব তথ্য চেয়েছে আমি তা সরবরাহ করব। তিনি জানান, বাংলাদেশ বিমানের যে কোনও ব্যক্তি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের তথ্যও দুদকের কাছে সরবরাহ করা হবে।
টিম প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের আইন-কানুন ও কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সহযোগিতা চেয়েছি। জবাবে তিনি দুদক টিমকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক ত্র“টির বিষয়ে কোনও দুর্নীতি হয়েছে কিনা টিম সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে।
জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক টিম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আইন, বিধি, পরিচালন পদ্ধতি, সরকারি অর্থের অপচয়ের দিক পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ছাড়াও জনসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি, দুর্নীতির কারণ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। কার্যক্রম পরিচালনার সময় দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালাবে। দুদক টিম ১ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অফিস পরিদর্শনে যাবে।
এদিকে সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ওয়াসার প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে এ সংক্রান্ত দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিম। পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত টিমের অপর দুই সদস্য উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহম্মেদ পাটোয়ারি ও সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনও সঙ্গে ছিলেন। পরিদর্শনকালে টিমের সদস্যরা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তারা বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন। বিভাগের প্রধান কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে টিমের সদস্যরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় ওয়াসার সহযোগিতা চান। জবাবে তাকসিম এ খান অনুসন্ধান টিমকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনি ওয়াসার একজন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং একজন সুপারকে দুদক টিমকে সহযোগিতা করার জন্য নিযুক্ত করেন। টিমের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কক্ষও বরাদ্দ করেন।
সূত্র জানায়, ওয়াসার প্রাতিষ্ঠানিক টিম চারটি বিষয়ে কাজ করবে। এর মধ্যে ওয়াসার দুর্নীতির উৎস ও কারণ চিহ্নিত করে কী পদক্ষেপ নিলে ওই দুর্নীতি বন্ধ হবে সে বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে টিম। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে দুর্নীতি রোধ করা যায় তাও সুপারিশের আওতায় আনা হবে। অন্যদিকে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ওপরও অনুসন্ধান চালাবে দুদক টিম। তিন ঘণ্টা ওয়াসা ভবন পরিদর্শন শেষে টিম প্রধান বেলাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, টিমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াসার এমডিকে অবহিত করেছি। প্রতিষ্ঠানটির আইন, বিধি, কার্যপরিধি, নিয়োগ, টেন্ডার সংক্রান্ত কিছু রেকর্ডপত্র দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে টিম পুরোদমে কাজে নামবে। ওয়াসার গ্রাহক হয়রানি এবং দুর্নীতির অভিযোগ গ্রহণের জন্য ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ বাক্স খোলার কথাও জানান তিনি।
এদিকে দুদক পরিচালক মজনুর আহম্মদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম ওই সংস্থার মতিঝিলস্থ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় টিমের অপর দুই সদস্য উপ-পরিচালক মলয় কুমার সাহা এবং সহকারী পরিচালক ওমর ফারুকও সঙ্গে ছিলেন। টিমের সদস্যরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএ’র কার্যালয়ে অবস্থান করেন। এ সময় তারা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং প্রতিষ্ঠানের ড্রেজিং নৌ সংরক্ষণ পরিচালন ও অর্থ শাখা পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রাম, টেন্ডার কেনাকাটাসহ ১২ ধরনের তথ্য চেয়েছে দুদক টিম। এর আগে একই টিম গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান জ্ঞান রঞ্জন শীলের সঙ্গে বৈঠক করে বেশ কিছু তথ্য জানতে চান।
সোমবার পরিদর্শন শেষে দুদক পরিচালক মনজুর আহম্মদ  বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানটির আইন-কানুন, বিধি ও কার্যপদ্ধতি সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র চেয়েছি। হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Recent Posts

Leave a Comment