ট্যানারি স্থানান্তর না করায় ৩০ কোটি টাকা জরিমানা

 In আইন আদালত, প্রধান খবর

হাজারীবাগ থেকে কারখানা স্থানান্তর না করায় পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী ১৫৪টি ট্যানারির মালিকদের জরিমানার বকেয়া বাবদ ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুসপ্তাহের মধ্যে উক্ত টাকা জমা দিতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত এক সম্পুরক আবেদন শুনানির পর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নিতে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় গত বছরের ১৮ জুলাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে ধার্য্য করেছিলেন আপিল বিভাগ। শিল্পসচিবকে এ অর্থ আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। সে জরিমানা আদায়ে ব্যর্থতার কারণে শিল্পসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে ব্যর্থতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গত ২৫ জানুয়ারি শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁঁইয়াকে তলব করেন হাইকোর্ট। শিল্পসচিব গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাজির হয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন।

শিল্পসচিব যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, যেখানে দেখা যায়- গত আগস্ট মাসে ১৫০টা কোম্পানি ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে মাত্র চারটি ও অক্টোবরে তিনটি কোম্পানি টাকা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ কারণে আদালতে আবেদন করেছিলাম সচিব তার দায়িত্ব পালন ও আদালতের নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আদালতে আমরা সম্পুরক আবেদন করেছিলাম। ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত জরিমানার বকেয়া টাকা জমা দেয়ার জন্য ট্যানারি মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। মনজিল মোরসেদ বলেন, ওই সময়ের মধ্যে তারা ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জমা না দিলে কারখানা বন্ধ বা মালিকদের গ্রেপ্তারের আবেদন জানাব আমরা।

এদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, রায় সম্পর্কে এখনো আমি ভালোভাবে জানি না। আর এতগুলো টাকা কিভাবে হলো তাও বুঝতে পারছি না। কারণ যেসব ট্যানারির বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছিল তাদের অনেক ট্যানারি ইতোমধ্যে সাভারে তাদের প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করেছে। তাই সম্পূর্ণ বিষয়টি না জেনে কোন মন্তব্য করতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে হাজারীবাগে ট্যানারি প্রতিষ্ঠান চালু রাখায় ১৫৪ প্রতিষ্ঠানের মালিককে জরিমানা ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। গত ১৮ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গত বছরের ১৬ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ট্যানারি মালিকদের পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রদানের নির্দেশ দেন। পরে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৩ জুন হাইকোর্টের আদেশ ১৭ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সে হিসেবে আবেদনটি শুনানির জন্য আসলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের জরিমানার সিদ্ধান্ত ঠিক রেখে পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিলেন।

Recent Posts

Leave a Comment