স্ত্রী অসুস্থ, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে স্বামী!

 In লিড নিউজ

তিনজন শিক্ষিকার মধ্যে অসুস্থতার কারণে গত দু’বছর ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না একজন। অপর দুই শিক্ষিকাও স্কুলে আসেন নিজেদের খেয়াল খুশিমত। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার স্বামী। ছাত্র-ছাত্রী বলতে হাতে গোনা কয়েক জন। বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের উত্তর গিলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

স্থানীয় অধিবাসী ও ভুক্তভোগী অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুরাইয়া বেগম, মাকসুদা বেগম এবং হেলেনা পারভিন নামের তিন জন শিক্ষক রয়েছেন এই স্কুলে। গত দু’বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগমের চোখের সমস্যা থাকায় তিনি শিক্ষকতা করতে পারেন না। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার ছুটি না নিয়েই তিনি দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন।

অন্যদিকে সুরাইয়া বেগমের পরিবর্তে উত্তর গিলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন তার স্বামী আব্দুল মান্নান। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে আব্দুল মান্নান স্কুল পরিচালনা করছেন অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, মাত্র আট থেকে ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত রয়েছে স্কুলে। তাদের সবাই খেলার মাঠে খেলায় রত।

ছাত্র-ছাত্রী এত কম কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষিকা মাকসুদা বেগম জানান, প্রতিদিনের চেয়ে আজ ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি একটু কম। এছাড়া পাশেই একটি নতুন স্কুল হয়েছে তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা সেখানে ভর্তি হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা শিক্ষা অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মচারিদের সহযোগিতায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নার্গিস পারভিন ও তার স্বামী মো. মোশারেফ হোসেন মাস্টার এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগমের স্বামী আব্দুল মান্নানের যোগসাজশে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে চলছে উত্তর গিলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, ‘আ. মান্নান নিজেই কোনো লেখা পড়া জানেন না, তিনি আবার ছাত্র-ছাত্রীদের কী পড়াবেন। তাছাড়া আব্দুল মান্নানের স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা অনিয়মের কারণে এই স্কুলে ভালো কোনো শিক্ষকও আসতে চান না।’

Barguna

ওই অভিভাবক আরও জানান, এ বিষয়ে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগম স্কুলে না আসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন। মাঝে মাঝে যখন অসুস্থ থাকেন তখন স্কুলে আসেন না। তার স্বামী আব্দুল মান্নানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, স্থানীয় একটি চক্র তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব অপপ্রচার করে আসছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগম অসুস্থ না থাকলে নিয়মিত স্কুলে ক্লাস নেন জানিয়ে বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নার্গিস পারভিন বলেন, পাশাপাশি আরেকটি স্কুল হওয়ায় আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী কমেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।

Recent Posts

Leave a Comment