অবহেলিত কারিগরি শিক্ষা

 In খোলা কলাম
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির সহায়ক শক্তি হিসেবে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকাশ জরুরি হলেও এর প্রসার ও মানোন্নয়ন আশানুরূপ নয়। তাই দেশে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে ক্রমশ ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, বাড়ছে বেকারত্বের হার। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ। দক্ষ জনশক্তি রফতানি কার্যক্রমও অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। অদক্ষ জনশক্তি প্রেরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণও হ্রাস পাচ্ছে। অথচ বেশিসংখ্যক মধ্যম স্তরের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণকারী প্রশিক্ষিত জনশক্তি প্রেরণ করা গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় অনেক বেড়ে যেতে পারে, দেশ মুক্তি পেতে পারে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে।
বর্তমানে দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষার অধীনে শিক্ষা গ্রহণরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উন্নত বিশ্বের চেয়ে অনেক কম। জাপানে এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলের শতকরা হার ৬০ ভাগের বেশি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪০ এবং মালয়েশিয়ায় ২৫ ভাগ। এ সংখ্যা হয়তো বর্তমানে আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কারিগরি শিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশের পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোর আশানুরূপ বিকাশ ঘটেনি। শিক্ষক স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত ও পুরনো যন্ত্রপাতি, মানহীন পাঠ্যপুস্তক দিয়ে এ শিক্ষার আশানুরূপ বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়নি। দেশে উন্নয়নের ধারা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্নাতক প্রকৌশলীর পাশাপাশি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও দক্ষ শ্রমপোযোগী জনশক্তির বিশেষ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই তিন ধরনের পেশাজীবীর গ্রহণযোগ্য অনুপাত ১ঃ৫ঃ২৫ হলেও বাংলাদেশে তা নেই। স্নাতক প্রকৌশলীর অনুপাতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এবং দক্ষ মানের কোর্সসম্পন্নকারী শ্রমপোযোগী জনগোষ্ঠী রয়েছে অনেক কম।
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। দেশে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্র আগের চেয়ে উন্মুক্ত হলেও তা আশানুরূপ নয়। দক্ষ জনশক্তির প্রসার ঘটাতে ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে সারা দেশে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক মানোন্নয়ন জরুরি। দেশের বর্তমান কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতিটি জেলায় আধুনিক মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন। সব সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে অবিলম্বে শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ এবং নতুন পদ সৃষ্টি করে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার। ৪ বছর মেয়াদি প্রকৌশল ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রম অনুসারে পর্যাপ্তসংখ্যক পাঠ্যপুস্তক এবং ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য উন্নত মানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া মানসম্পন্ন শিক্ষাদান সম্ভব নয়।
বর্তমান সরকারের দিনবদলের যে অঙ্গীকার রয়েছে, সে প্রক্রিয়ায় দেশের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের যথাযথ অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে মধ্যম স্তরের কারিগরি শিক্ষা বিকাশের ধারা গতিশীল করতে হবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেবে সরকার, এটাই প্রত্যাশা।
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ : প্রাবন্ধিক ও গল্পকার
Recent Posts

Leave a Comment