সরকারি সেবাপ্রাপ্তিতে ভোগান্তি কেন?

 In খোলা কলাম
সরকারি কর্মকাণ্ড অনেক ধীরগতির হয় এটি আগেই শুনেছিলাম। কিন্তু এবার বাস্তবে সেই অভিজ্ঞতা হল। আমার মায়ের কল্যাণ ভাতার আদেশনামার কার্ড হারিয়ে যায় গত এপ্রিল মাসে। সেটি নতুন করে ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া করতে গিয়েই এ দুর্ভোগের মুখোমুখি হই। নিয়ম অনুযায়ী আমরা থানায় জিডি করেছি, যথাযথ অফিস থেকে অনুমতি নিয়েছি। তারপর সব কাগজ আমি ও আমার মা সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিয়ে আসি।
কিন্তু সেখানে গিয়েই হয় ভিন্নরকম এক অভিজ্ঞতা। দাফতরিক ঘুষ কাকে বলে সেই অভিজ্ঞতা এর আগে আমার ছিল না। কিন্তু ওই অফিসে গিয়ে দেখি, দায়িত্বরত পিয়ন থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত ঘুষ ছাড়া কাজ করে না। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্নভাবে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করছে। তথ্যদাতা কর্মচারী সঠিক তথ্য দেয় না। এক অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ অফিসের দেয়ালেও টাকা চায়। অফিসের সীমাহীন দুর্নীতির কথাই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন।
আমরা আমাদের কাজের জন্য টাকা জমা দিয়েছি এপ্রিল মাসে, কিন্তু এখন জুন মাস অবধি আমরা সেই কাজের কোনো অগ্রগতি দেখলাম না। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে মোবাইল নম্বর চাইলে তারা বলেন, এই অফিসের কোনো অফিসিয়াল মোবাইল নম্বর নেই। অফিসটি চলছে মান্ধাতা আমলের প্রক্রিয়ায়, যেখানে গেলেই বোঝা যায় সেবাগ্রহীতাদের কীভাবে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যুক্ত হয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের মূল ওয়েবসাইটগুলোর সঙ্গে ই-মেইল, ফেসবুক ও মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকলে ব্যবহারকারীরা সহজেই সেবাদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে একজন লোক নিয়োজিত থাকলে সরকার ও জনগণ উভয়েই উপকৃত হবে।
যেখানে সামান্য একটি কার্ডের নতুন কপি ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেয়া যায়, সেখানে আবেদনের তিন মাস পরও আমরা জানি না কবে আমাদের আবেদন করা কাজটি কবে সমাপ্ত হবে। অর্থমন্ত্রী এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে ই-ফাইলিংয়ের কথা বলেছেন। তার দেয়া তথ্যমতে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর অফিসসহ ২০টি জেলার জেলা প্রশাসনে ই-ফাইলিং সিস্টেম চালু আছে। দেশের সব দফতরেই এ ব্যবস্থা চালু হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।
ব্যাপক সময়ক্ষেপণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়া সরকারি কাজের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস কমিয়ে দেয়। যেখানে সরকারি অফিসের কাজ জনসাধারণের কল্যাণ নিশ্চিত করা, সেখানে ভোগান্তি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন দ্রুত এই ভোগান্তি লাঘবে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
মো. সেলিম রেজা : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Recent Posts

Leave a Comment