দুর্নীতি-অনিয়ম রোধ

 In খোলা কলাম
দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ, আমলাদের গাফিলতি-অবহেলা দূর করা, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে জোর দেয়ার জন্য সচিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সচিব সভায় জানানো প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান ও নির্দেশনা আমলে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অস্বীকার করার উপায় নেই, দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে অনেক উদ্যোগ থাকলেও কেন সেগুলো ফলপ্রসূ হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হওয়ার পরও দুর্নীতি-অনিয়মের মাত্রা আগের মতোই থেকে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনকই বটে। বেতন-ভাতা বেড়েছে, দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করতে হবে, এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী এবং কার্যকর করতে দুদক আইন সংশোধন করতে হবে- প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের নির্দেশনা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এটা কেবল বক্তব্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থানের প্রমাণ দিতে হবে।

কেবল বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনভোগান্তির বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা। সরকার যথাসময়ে বাজেট বরাদ্দ দিলেও কেন শুধু বর্ষা মৌসুমেই উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে নগরবাসীকে অবর্ণনীয় কষ্টে ফেলতে হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়া অর্থবছরের পুরো সময় বসে থেকে শেষ দুই তিন মাসে এসে এডিপি বাস্তবায়নের তোড়জোড়ের সংস্কৃতিরও পরিবর্তন হওয়া দরকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, বরাদ্দকৃত অর্থ স্বল্প সময়ে শেষ করতে গিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ঘটার পাশাপাশি টেকসই কাজও নিশ্চিত করা যায় না। ফলে জনগণের করের অর্থের বহুমুখী অপচয় হলেও কাক্সিক্ষত সুফল মেলে না। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। এজন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক কাজের অগ্রগতি মনিটরিং করা যেতে পারে। প্রকল্পের ধীরগতির জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যায়।

দেশে বর্তমানে শিক্ষিত বেকার তরুণদের মধ্যে তীব্র হতাশা বিরাজ করলেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ খুব একটা নেই। অথচ সরকারি বিভিন্ন দফতরে লাখ লাখ পদ খালি পড়ে আছে। এমনকি জনসম্পদের অভাবে নিয়মিত কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় শূন্যপদ পূরণে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। এটা অনুমেয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা করিৎকর্মা হলে ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে নিয়োগ কার্যক্রম থেকে শুরু করে সব বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলতে হবে না।

লক্ষণীয়, প্রায় সব মামলার বেলাতেই হারতে হচ্ছে সরকারকে। এটা কেবল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা, নিয়মিত ফাইল ওয়ার্ক না করার কারণে হচ্ছে, নাকি উৎকোচ-কমিশন নিয়ে স্বেচ্ছায় সরকারকে হারানো হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো মামলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-আইনজীবীদের সমন্বয় ও কঠোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে জয় ছিনিয়ে আনার উদ্যোগ থাকতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক স্থায়ী অ্যাটর্নি ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া যায়। সরকার একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। এর সব শাখা-প্রশাখা ইতিবাচক ও সমন্বিতভাবে কাজ করলে দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিত করা কঠিন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমলে নিয়ে প্রশাসন অবিলম্বে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

Recent Posts

Leave a Comment