ভারতের দিকে তাকিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা হিন্দুরা
ভারতের দিকে তাকিয়ে আছেন রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক শত রোহিঙ্গা। তাদের প্রত্যাশা হিন্দু জাতীয়বাদী বিজেপির নেতা নরেন্দ্র মোদি এখন ক্ষমতায়। তিনি তাদেরকে ঠাঁই দেবেন। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের বঞ্চিত রাখাইন রাজ্যে তারা ফিরে যেতে চান না। সেখানে ফেরার কথা মনে হলেই আতঙ্ক গ্রাস করে তাদেরকে। আবার মুসলিম প্রধান বাংলাদেশকেও তারা উপযোগী মনে করছেন না। তাই তারা আশা করছেন, নরেন্দ্র মোদি তাদেরকে জায়গা দেবেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের সহিংসতার মাঝে পড়ে পালিয়ে এসব হিন্দু বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন। সংখ্যায় তারা প্রায় ৫০০। বর্তমানে অবস্থান করছেন কুতুপালংয়ে পরিস্কার করে দেয়া একটি মুরগির খামারে। তবে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা কমপক্ষে ৪ লাখ ২১ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম যেখানে অবস্থান করছেন সেখান থেকে কয়েক মাইল দূরে তাদের অবস্থান। বাংলাদেশ ও ভারতের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে মোদি সরকার। এমনকি তাদেরকে ভারতের নাগরিকত্বেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা নিরঞ্জন রুদ্র বলেছেন, ভারত হিন্দুস্তান নামেও পরিচিত। হিন্দুস্তান মানে হিন্দুদের দেশ। আমরা ভারতে বেশি কিছু চাই না। আমরা শুধু শান্তিপূর্ণ জীবন চাই। আমরা মিয়ানমার বা অন্য কোথাও সেই শান্তি পাবো না। এ সময় নিরঞ্জনের আশপাশে এসে জড়ো হন অন্য রোহিঙ্গা হিন্দুরাও। নিরঞ্জনের কথার সঙ্গে সঙ্গে তারাও মাথা নাড়েন। তারা বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে তারা তাদের এই বার্তাটি পৌঁছাতে চান ভারত সরকারের কাছে। রয়টার্স লিখেছে, হিন্দু শরণার্থীদের এই আশাবাদের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত সরকার। তবে সরকারের একটি সূত্র বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে একটি আপিলের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করছেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সিনিয়র একজন সদস্য অচিন্ত বিশ্বাস বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালানো হিন্দুদের একটি প্রাকৃতিক গন্তব্য হলো ভারত। তিনি ফোনে বলেন, হিন্দু পরিবারগুলোকে অবশ্যই ভারতে প্রবেশ করতে দিতে হবে সরকারকে। তারা কোথায় যাবে? ভারত হলো তাদের আদিস্থান। অচিন্ত বিশ্বাস আরো বলেন, শরণার্থী ইস্যুতে এবং মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে আশ্রয় চাওয়া হিন্দুদের ভারতে আশ্রয় দেয়ার একটি নতুন পলিসি অনুমোদন দেয়ার দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কে এস ধাতওয়ালিয়া। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ বা মিয়ানমার থেকে সহিংসতায় আক্রান্ত কোনো হিন্দু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নি। এই মুহূর্তে হিন্দুদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোনো এসওএস (সেভ আওয়ার সাউল) আমরা পাইনি। পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা হিন্দু নিরঞ্জন রুদ্র রয়টার্সকে দেখিয়েছেন একটি অস্থায়ী নাগরিকত্বের কার্ড। এটি কর্তৃপক্ষ ইস্যু করেছিল ১৯৭৮ সালে। ওই কার্ডে নিরঞ্জরে জাতি ভারতীয় এবং ধর্ম হিন্দু উল্লেখ করা হয়েছে