মন্ত্রীদের দেয়া কথা রাখেননি মিল মালিকরা
সিন্ডিকেট করে চালের বাজার অস্থির করার অভিযোগ চালকল মালিকদের নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে বৈঠক করেন সরকারের তিন মন্ত্রী। ওই বৈঠকে মিল মালিকরা ঘোষণা দেন চালের মূল্য দুই থেকে তিন টাকা কমানো হবে।
তবে মন্ত্রীদের কাছে দেয়া কথা রাখেননি মিল মালিকরা। বুধবার বিকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এক টাকাও চালের দাম কমাননি মিল মালিকরা। সরকারের কোনো পদক্ষেপেই ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজারে প্রভাব ফেলতে পারছে না।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চালের মোকাম কুষ্টিয়ার বাজারে এখনো সব ধরনের চাল সেই আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন মজুদদারদের লাগাম টানতে মাঠে নামলেও তার কোনো সুফল আসছে না। বরং সেই অস্থিরতার মধ্যেই রয়েছে।
খুচরা বাজারে চিকন চাল মিনিকেট এখনও বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়, কাজললতা ৫৬ এবং আটাশ ও মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৫৪ ও ৪৫ টাকা কেজিতে।
গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের অন্যতম বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশীদের মিলসহ বেশ কয়েকটি বড় মিলে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়েছে দফায় দফায়। নামমাত্র অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলেও বড় ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি টাস্কফোর্স। যদিও একটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে রশীদ এ্যাগ্রো ফুডসহ প্রায় ৭০টি মিলে বিপুল পরিমাণ ধান ও চালের অস্বাভাবিক মজুদের প্রমাণ মেলে।
সর্বশেষ গত সোমবার টাস্কফোর্স বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা এবং মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেশের চালকল মালিকদের বৈঠকের পর চালকল মালিকরা চালের দাম কমানের ঘোষণা দিলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
কুষ্টিয়ার পৌরবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রঞ্জুর রহমান নিশান জানান, চালের বাজার আগের মতই অস্থির রয়েছে। মোকামে কোনো দাম কমেনি। তাই বর্ধিত দামেই বিক্রি করছি।
জেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, চালের বাজারে নিয়মিত মনিটরিং চলছে। তবে বাজার পরিস্থিতি এখনও আগের মতই রয়েছে। অবশ্য দু-একদিনের মধ্যেই বাজারে চালের দাম কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ যুগান্তরকে জানান, ব্যবসায়ীরা আতংকে রয়েছেন। মোকামে কেউ চাল কিনতে আসছেন না। মিলাররা চাল দুই-এক টাকা কমে বেচতে চান, কিন্তু চাল কেনার কোনো ক্রেতা নেই।
কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফ্রেশ এ্যাগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক যুগান্তরকে জানান, সোমবার টাস্কফোর্সের অভিযানের পর মোকাম অনেকটাই থমথমে। ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম। তবে খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি। আগের সেই চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে চালকল মালিক ওমর ফারুক অবশ্য খুচরা ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, তাদের পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লুটছেন। তারা আগের সেই বর্ধিত দরেই বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং দরকার। তাছাড়া সচিবালয়ে বৈঠকের পর চালের দাম কমানোর কথা বলা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে কি না- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে দু-একদিনের মধ্যেই বাজার কমে আসবে।
এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়ার চালকলগুলোতে টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, মোকামে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী অসদুপায় অবলম্বন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে চালের বাজার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মঙ্গলবার থেকে ওএমএস কার্যক্রম শুরু হয়েছে কুষ্টিয়ায়। মঙ্গলবার জেলা শহরের ৬টি স্পটে চাল বিক্রি হয়েছে। তবে বুধবার থেকে উপজেলা পর্যায়ে চাল বিক্রির কথা থাকলেও তা হয়নি।
জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির রহমান যুগান্তরকে জানান, প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হওয়ায় বুধবার উপজেলা পর্যায়ে চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চাল বিক্রি শুরু হবে।