রোহিঙ্গাদের চাঁদপুর জেলা ইসলামী ফ্রন্টের অর্থ সহায়তা প্রদান
স্টাফ রিপোর্টারঃ
মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে সে দেশের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে যে সব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মাঝে অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চাঁদপুর জেলা শাখা। কক্সবাজার জেলার উখিয়ার বালুখালী শরণার্থী শিবিরে গিয়ে অসহায় নির্যাতিত মানুষগুলোর মাঝে নেতৃবৃন্দ ওই অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। এই শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া অসংখ্য অগণিত পরিবারের মধ্যে প্রায় এক হাজার পরিবারের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেয়া হয়। এছাড়া কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালসহ তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ও অসুস্থ রোহিঙ্গাদের মাঝেও অর্থ প্রদান করেন ইসলামী ফ্রন্ট চাঁদপুর জেলার ওই ত্রাণ টিম। গত ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নেতৃবৃন্দ এই অর্থ সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যান।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ৮টায় উখিয়ার উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসযোগে রওয়ানা হন। পরদিন শনিবার সকাল ৮টায় তারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলাধীন বালুখালী শরণার্থী শিবির এলাকায় গিয়ে পৌঁছেন। এই ১২ সদস্য টিমের অন্যরা হচ্ছেন : ইসলামী ফ্রন্টের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন করিব, অর্থ সম্পাদক ও ইসলামী যুবসেনার জেলা সভাপতি পীরজাদা মাওঃ খাজা মোঃ জোবায়ের, হাজীগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক গাজী মোঃ আবদুর রাহীম, চাঁদপুর জেলা সদস্য মাওঃ সানাউল্লাহ নূরী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল বাকী, বর্তমান সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন, যুবসেনার হাজীগঞ্জ উপজেলা নেতা হাফেজ মোঃ জুনায়েদ ছাত্রসেনা চাঁদপুর সদর উপজেলা সভাপতি মোঃ মামুন হোসেন, কচুয়া উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মোঃ ইব্রাহিম ও জেলা যুবসেনা নেতা আঃ মুন্নাফ।
ইসলামী ফ্রন্টের এই ত্রাণটিম ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ৮টায় উখিয়ার রালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কাছে গিয়ে পৌঁছান। প্রথমে তারা রাস্তার দু’পাশে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেয়া ক’জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সাথে কথা বলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ফরজু বেগম (৩৫) (স্বামী নিখোঁজ), খালেদা বেগম (৩৬) (স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে), কুলছুমা (২৫), রাবেয়া খাতুন (৬০) ও রাবেয়া বেগম (৪০)। এদের সাথে কথা বলার সময় শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু সেখানে ভিড় করে। অবস্থা আঁচ করতে পেরে ত্রাণ টিম নিজেদেরকে রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে এবং রিপোর্টিং করার জন্যে এসেছেন বলে সেখান থেকে সরে যায়। কিছুক্ষণ পর ত্রাণ টিম বিভক্ত হয়ে দুর্গম পাহাড়ের উপর উঠে যান। যেখানে ত্রাণ নিয়ে খুব কম মানুষই যায়। পাহাড়ের উপর পলিথিন দিয়ে ছোট ছোট খুপড়ী ঘর করে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ শুরু করেন ওই ত্রাণ টিমের সদস্যরা। এই পাহাড়ের আড়ালে থাকা আরেকটি পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের কাছে যায় ত্রাণ টিম। তারা প্রত্যেক ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের হাতে অর্থ তুলে দেন। দুই পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৮শ’ পরিবারের মাঝে ইসলামী ফ্রন্টের ত্রাণটিম অর্থ সহায়তা প্রদান করে। এরপর তারা বালুখালী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সর্বশেষ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে যান। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে এবং অসুস্থ হয়ে এই তিনটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোহিঙ্গাদের হাতে অর্থ তুলে দেন ইসলামী ফ্রন্টের ত্রাণটিম। সবমিলিয়ে প্রায় এক হাজার নির্যাতিত অসহায় রোহিঙ্গা পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন ইসলামী ফ্রন্ট চাঁদপুর জেলা শাখার ত্রাণটিম। এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ করে ত্রাণটিম গতকাল রোববার ভোর পৌনে ৬টায় চাঁদপুর এসে পৌঁছে।
উল্লেখ্য, এই ত্রাণ বিতরণকালে ইসলামী ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের বর্বরোচিত নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন।