সীমান্তে স্থলমাইন দিচ্ছে মিয়ানমার
মিয়ানমার-কক্সবাজার সীমান্তে এখন নতুন করে দেখা দিয়েছে স্থলমাইন আতঙ্ক। উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের আঞ্জুমানপাড়া থেকে শুরু করে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম আচারতলা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে বিপুল সংখ্যক স্থলমাইন ও উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরক বসিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত বাহিনী বিজিপি।
এসব স্থলমাইন বিস্ফোরণে প্রায়ই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। এখন পর্যন্ত মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নারী নিহত ও অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যাতে ফের মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই দেশটি স্থলমাইন ও বিস্ফোরক বসাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিজিবি কর্মকর্তারা। সীমান্তে স্থলমাইন বসানোকে তারা আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেছেন।
মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া উত্তর পাড়া এলাকা থেকে তুমব্রুর আশ্রয় শিবিরে আসা রোহিঙ্গা শরিয়ত উল্লাহ(৩০) জানান, সীমান্তের ওপারে জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় এপারে এসেছি। কিন্তু জিরো লাইনে এসে নতুন শঙ্কার মধ্যে পড়েছি। স্থলমাইনের কারণে ওপারে যেতে পারছি না।
রোহিঙ্গা জাফর আলম জানান, তার স্ত্রী সাবেকুন নাহার (৪৫) সীমান্ত ওপারে বসতবাড়ি তালা দিতে গিয়ে স্থলমাইন বিস্ফোরণে মারাত্মক আহত হন। চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পরের দিন একই জায়গায় স্থলমাইন বিস্ফোরণে মো. কায়সার (১০) ও মোহাম্মদ আলম (৮) নামে আরও দুই রোহিঙ্গা শিশু আহত হয়। উখিয়া সীমান্তে আহত হয় আরও এক রোহিঙ্গা। এরপর থেকে অনেকে কাটাতাঁরের বেড়া এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত এলাকায় টহল দেয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গর্ত করে স্থলমাইন ও বিস্ফোরক রেখে মাটি চাপা দিতে দেখেছেন।
সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা জানান, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তুমব্রুর ওপারে সেনাবাহিনী মাইন পুঁতা শুরু করার পর স্থানীয়রা কয়েকটি মাইনের ওপর ঢিল ছুড়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে নতুন নতুন মাইন ও বিস্ফোরক ভর্তি রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হামলার ঘটনা বন্ধ না হওয়ায় এখনও দলে দলে তারা বাংলাদেশের প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মনঞ্জুরুল হাসান খান জানান, ‘সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে স্থলমাইন ও ইমপ্রোভাইস এক্সপ্লুসিভ ডিভাইস (আইইডি) বসানোর কথা আমরাও শুনেছি। সত্যি এমন হলে তা আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। ’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নজরে আসার পর কূটনৈতিক চ্যানেলে ইতোমধ্যে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তবে গত ২৯ আগস্টের পর থেকে বিজিপির সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সরওয়ার কামাল জানান, বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। সেখান থেকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ স্টেশন ও একটি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এরপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার গানশিপের ব্যাপক ব্যবহার করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে মিয়ানমার সরকারের হিসাবে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত শত শত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের দাবি, পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।
অবশ্য চলতি মাসের শুরুতে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বার্মা সেনাদের গণহত্যার বদলা নিতেই রোহিঙ্গা স্বাধীনতাকামীরা পুলিশ পোস্টে হামলা ও একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা বস্তি পরির্দশন করেছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিলে এরদোগান। তিনি এসময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।