ক্যান্টিন বয় থেকে ৩০০ সিনেমার নৃত্য পরিচালক
এ যেন রূপকথার গল্প! ক্যান্টিন বয় থেকে হয়ে গেলেন নৃত্য পরিচালক। আর গল্পটি তৈরি করেছেন এই সময়ের ব্যস্ত নৃত্য পরিচালক এ কে আজাদ। প্রায় ৩০০ ছবিতে একক নৃত্য পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার ঝুলিতে।
নানান চেষ্টা-তদবিরের পর মিলে গেল সুযোগ। বিএফডিসির ক্যান্টিনে ফুট-ফরমাশ খাটার চাকরি জুটে যায়। ক্যান্টিন বয় হিসেবে শুরু হয় তার চলচ্চিত্র জীবন।
কিন্তু শুধু ক্যান্টিন বয় হয়ে থাকার জন্য তো তার জন্ম হয়নি। ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি আজাদের ছিল তুমুল আগ্রহ। বিয়ে বাড়ি, খৎনা উৎসবে বন্ধুরা মিলে নেচেও বেড়াতেন। এফডিসিতে বসে সেই ইচ্ছাটা জেগে উঠল আবার।
মওকাও পেয়ে গেলেন। নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজাকে তার ইচ্ছের কথা জানান। আজিজ রেজা ভর্তি করালেন নিজের একাডেমিতে। শুরু হলো তালিম।
আজাদ বলেন, ‘আজিজ রেজা আমার নাচের প্রথম ওস্তাদ। তার সদিচ্ছা ছাড়া আমার আজকের নৃত্য পরিচালক হওয়া সম্ভব ছিল না। তার প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’
আজিজ রেজার নির্দেশনায়ই চলচ্চিত্রের গ্রুপ ড্যান্সে অংশ নিতে থাকলেন আজাদ। ব্যতিক্রমী প্রতিভার কারণে নজরে পড়েন বিখ্যাত নৃত্য পরিচালক আমির হোসেন বাবুর। নিয়ে যান নিজের দলে, সহকারী হিসেবে তাকে গড়ে তোলেন।
আমির হোসেন বাবুর মতো শিক্ষক পেয়ে এ কে আজাদ যেন সত্যি সত্যি জ্বলে ওঠেন। মন-প্রাণ দিয়ে শিখতে থাকেন গুরুর কাছ থেকে। পাশাপাশি নিজেকে আরো ক্ষুরধার করতে শিখে নেন ক্ল্যাসিকাল।
প্রায় দশ বছর আমির হোসেন বাবুর সহকারী হিসেবে পাঁচ শতাধিক ছবির নৃত্য পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন আজাদ। ২০০৩ সালে বাবু মারা গেলে শুরু হয় একক নৃত্য পরিচালক হিসেবে পথ চলা। ধীরে ধীরে নিজেকে তুলে এনেছেন অন্য উচ্চতায়।
শীর্ষ নৃত্য পরিচালক হওয়ার গল্প প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা আমার প্রেম ও সংগ্রামের গল্প। প্রেম ছিল নৃত্যের সঙ্গে। আর সংগ্রাম ছিল পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে। যেহেতু প্রথাগত শিক্ষার বাইরে আমি মূলত ওস্তাদদের কাছ থেকে কাজের ক্ষেত্র থেকেই শিখেছি বেশি, তাই চারপাশের জন্য এটা মেনে নেওয়া ছিল কঠিন। কিন্তু কাজটা আমি করতে পেরেছি। আর এই সংগ্রামের গল্পটা এই জন্য বলছি যে, একাগ্রতা থাকলে যে কোনো কাজেই সফল হওয়া যায় তা এই প্রজন্মের জানা উচিত।’
এ কে আজাদের নৃত্য পরিচালনায় মুক্তি পাওয়া ছবির মধ্যে বরিশালের মাইয়া ঢাকার পোলা, দানব সন্তান, তুই যদি আমার হইতিরে, মেঘের কোলে রোদ, রং নাম্বার, জাগো, জগৎ সংসার, আকাশ কত দূরে প্রভৃতি।
এদিকে নাচের একাডেমিও পরিচালনা করছেন আজাদ। ‘আজাদ আ স্কুল অব ডান্স’ নামের প্রতিষ্ঠানটি মগবাজার রেলগেটের পাশেই অবস্থিত। এখানেই নাচ শিখেছেন নিলয়, আরিয়ান শাহ, রাজ, ইমন, পূর্ণিমা, শাহনুর ও কারিশমা’সহ অনেকে।