ডিভি লটারি বন্ধের উদ্যোগ ট্রাম্পের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাইভার্সিটি (ডিভি) লটারি প্রোগ্রামের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল থেকে প্রতিবছর জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণির একটি নির্দিষ্টসংখ্যা লোক অভিবাসী হিসেবে দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং স্থায়ী বসবাসের অনুমতি হিসেবে তাদের গ্রিন কার্ড দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের জন্য এ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার সব দেশের জন্য তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভাষ্য হলো- গ্রিন কার্ড পাওয়া এসব লোক সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত হচ্ছে। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কাছে হাডসন নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া একটি সাইকেল চালানোর রাস্তায় পিক-আপ ট্রাক নিয়ে হামলা চালিয়ে আট জনকে হত্যা ও ১১ জনকে আহত করা লোকটি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদর্শে প্রলুদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের লোক যাতে প্রবেশ করতে না পারে, যে যুক্তি দেখিয়ে ডিভি লটারি বন্ধ করার কথা বলেছেন ট্রাম্প।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী সাইফুলো হাবিবুল্লায়েভিক সাইপোভ একজন উজবেক। তার বয়স ৩৫ বছর। ডিভি লটারির মাধ্যমে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তিনি। মঙ্গলবার তার চালানো হামলা ২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আল-কায়েদার সন্ত্রাসী হামলার পর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।
বুধবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিভি লটারি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করছি আমি।’ তিনি আরো বলেন, নিউ ইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের স্থান থেকে কয়েকটি ব্লক দূরে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলার জন্য আজ আমরা শোক প্রকাশ করছি। লোকটি সাইকেল চালানোর একটি রাস্তায় ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে আট জনকে হত্যা করেছে এবং খুবই মারাত্মকভাবে ১১ জনকে আহত করেছে।’
ট্রাম্প তার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব পরিবার তাদের অনেক ভালোবাসার মানুষদের হারিয়েছে, তাদের জন্য পুরো আমেরিকা প্রার্থনা করছে ও সমবেদনা জানাচ্ছে। ভয়ংকর কাণ্ড! তাদের জন্য আমাদের হৃদয় কাঁদছে।’ এ ছাড়া সন্ত্রাসী হামলা চালানো উজবেক লোকটিকে ‘জন্তু’ বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবেশে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানের যাত্রীদের বিমানবন্দরে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বনের অংশ হিসেবে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন মার্কিন অভিবাসন ও ভ্রমণবিষয়ক কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ১১টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর নতুন কড়াকড়ি আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়ার অজুহাতে এবার ডিভি লটারি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানালেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
হালমাকারীর মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং দ্রুত বিচার শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব জন্তুরা (হামলাকারী) যেভাবে শাস্তি পাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক দ্রুত ও আরো কঠিন শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
হামলাকারী সাইপোভ সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, লোকটি ডিভি লটারির মাধ্যমে এসেছিল কিন্তু তার জন্যই আরো ২৩ জন যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ পেয়েছে। এটি অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের সন্ত্রাসীকে কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ানতানামো বন্দিশালায় পাঠানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘তাকে গিটমো (গুয়ানতানামো) পাঠাও। আমি হলে তা-ই করতাম।’ তিনি অভিযোগ করেন, ডেমোক্র্যাটদের জন্য অনেক ভালো ভালো বিল বাতিল হচ্ছে। তার কারণ ডেমোক্র্যাটরা ‘প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী’। সন্ত্রাসীরা আমাদের দেশে হামলা অব্যাহত রাখতে চাইছে। ফলে আমেরিকাকে নিরাপদ রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আরো বেশি অবদান রাখতে হবে। তবে বর্বর নির্যাতনের স্থান গুয়ানতানামো বন্দিশালার পক্ষে ট্রাম্পের সাফাইকে তীব্র আক্রমণ করে সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থি রাজনীতিকরা। বহু নিরপরাধ মানুষকে বিনা অভিযোগে আটকে রেখে বছরের পর বছর নির্যাতন করা হয়েছে এই বন্দিশালায়। মাত্র ১০-১৫ জন বাদে সব বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার সেই বন্দিশালার পক্ষে ট্রাম্পের যুক্তি শুনে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
১৯৯০ সালে ডিভি লটারির মাধ্যমে অভিবাসী নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত বৈচিত্র্য ধরে রাখার জন্য তাদের নেওয়ার পর গ্রিন কার্ড দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়া বাতিল করে এখন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রক্রিয়াকে ‘মেধা-ভিত্তিক’ করতে চান ট্রাম্প। তবে নতুন প্রক্রিয়ায় মেধার ভিত্তিতে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পাবে, তারা তাদের বৃহৎ পরিবারের সদস্যদের আনার সুযোগ পাবে না।
তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন