শিশুর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগে কাজ হচ্ছে
বিশেষ প্রতিবেদনঃ
সর্দি-জ্বর হলেও আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই না। হাতের কাছের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে তা খাই। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক।
এদিকে, আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই, এমন ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে মাত্রাতিরিক্তহারে তা ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি আটটি দেশে দু’বছরের কমবয়সী শিশুদের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে। এতে দেখা গেছে, একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতিটি শিশু বছরে গড়ে ১০ বারের বেশি অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ ছাড়া ব্রাজিল, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, পেরু, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তানজানিয়ায় শিশুরা বছরে প্রায় ৫ বার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে শিশুরা বছরে মাত্র ০.৯ থেকে ১.৭ বার অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স নেয়।
আইসিডিডিআরবি’র নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিনা আহমেদ জানান, পরিণতি সম্পর্কে না জেনেই বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে শিশুদের ওপর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু ও কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মাঈনউদ্দিন জানান, আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ শিশুকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। রোগ না জেনে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার ফলে সেটি থেকেই শিশুর শরীরের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসগুলো পুষ্ট হচ্ছে। রোগ বিস্তারে আরো সহায়তা করছে। এতে শিশুর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, চিকিৎসক শিশুর রোগ বুঝে যে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স দিবেন, তা অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। কারণ, কোর্স শেষ না করায় ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিক সহনীয় ওঠে। এতে এক সময়, ওষুধে কোনো কাজ হয় না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং অ্যান্টিবায়োটিক গবেষক ডা. সাইদুর রহমান বলেন, ‘ শুধু শিশুদের ক্ষেত্রেই নয়, আমাদের দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সুযোগ পান না। তারা যেকোনো অসুখে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেন। এতে শরীরের ক্ষতিকারক দুর্বল ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা গেলেও চতুর ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিককেই কাজে লাগিয়ে সহনীয় হয়ে ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে এসব ব্যাকটেরিয়াগুলো যেকোনো প্রতিষেধকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং রোগীর বর্জ্যের সঙ্গে অন্যের শরীরে প্রবেশ করে সেখানকার ক্ষতিকারক জীবানুগুলোকেও সচেতন করে তোলে।’